তাপ ও উষ্ণতা প্রশ্ন উত্তর Study Learn
তাপ ও উষ্ণতা [HEAT AND TEMPERATURE]
তাপ (Heat)
তাপ সম্বন্ধে আমাদের সকলেরই একটা ধারণা আছে। বরফে হাত দিলে ঠাণ্ডা লাগে, আবার গরম জলে হাত দিলে গরম বোধ হয়। যে বাহ্যিক কারণে আমাদের গরম বা ঠাণ্ডার অনুভূতি হয়, তাকে তাপ বলে।
পদার্থের মত তাপের কোন বর্ণ, গন্ধ, আকার, আয়তন কিংবা ভর নেই। তাই তাপের অস্তিত্ব বুঝতে হলে তাপকে কোন না কোন বস্তুর মাধ্যমে বুঝতে হয়। কোন পদার্থে তাপ প্রয়োগ করলে বস্তুটি গরম হয়, আবার তাপ বর্জন করলে বস্তুটি ঠাণ্ডা হয়। তাই বলা যায়, যা গ্রহণ করলে কোন বস্তু গরম হয় এবং বর্জন করলে ঠাণ্ডা হয়, তাকেই তাপ বলে।
কোন বস্তুর মধ্যে তাপ সৃষ্টির কারণ লক্ষ্য করলে দেখা যাবে যে, সব সময় কোন না কোন শক্তি ব্যয়িত হয়ে তাপ উৎপন্ন হয়। পাথরের দুটি টুকরো নিয়ে ঘষলে তাপ উৎপন্ন হয়। এখানে ঘর্ষণের ফলে, যে যান্ত্রিক শক্তি ব্যয়িত হয় তা তাপে রূপান্তরিত হয়। কয়লা পোড়ালে তাপ পাওয়া যায়।
এখানে কয়লার মধ্যে সঞ্চিত রাসায়নিক শক্তি তাপে রূপান্তরিত হয়। আবার বৈদ্যুতিক বাল্বে তড়িৎ চালনা করলে আলো এবং তাপ সৃষ্টি হয়। এখানে বৈদ্যুতিক শক্তি থেকে তাপ উৎপন্ন হয়। সুতরাং তাপ সৃষ্টি করতে সবসময় শক্তির প্রয়োজন হয়। আবার শক্তির প্রকাশের জন্য মাধ্যমের কর প্রয়োজন।
তাই যখন কোন বস্তু গরম বা ঠাণ্ডা হয় তখন বস্তুর মধ্যে তাপের প্রকাশ বুঝতে পারি। তাই তাপকে এক প্রকারের শক্তি বলে ধরা যায় — তাপ জড় পদার্থ নয়।
তাপ ও উষ্ণতা : তাপের সংজ্ঞা
সংজ্ঞা : তাপ এক প্রকার শক্তি—যা গ্রহণ করলে বস্তু গরম হয়ে ওঠে এবং বর্জনে ঠাণ্ডা হয়ে ! যায়, তাকেই তাপ বলে।
3.2. তাপের স্বরূপ (Nature of Heat)
তাপের স্বরূপ কি—এ বিষয়ে দুটি মতবাদ প্রচলিত ছিল। একটি হল তাপের ক্যালোরিক মতবাদ (Caloric Theory)—যা বহুদিন প্রচলিত ছিল কিন্তু এখন ভুল বলে প্রমাণিত হয়েছে। অন্যটি হল তাপের গতীয় মতবাদ—যা দিয়ে তাপের স্বরূপ সঠিকভাবে ব্যাখ্যা করা যায়।
ক্যালোরিক মতবাদ :
প্রায় দু’শ বছর আগে বিজ্ঞানীদের ধারণা ছিল , তাপ হল এক ধরনের ভারহীন, সূক্ষ্ম তরল বা গ্যাসীয় পদার্থ যা কম-বেশী সব বস্তুর মধ্যে থাকে এবং এক বস্তু থেকে অন্য
বস্তুর মধ্যে সঞ্চালিত হতে পারে। তারা এর নাম দেন ক্যালোরিক। কোন বস্তুর মধ্যে ক্যালে প্রবেশ করলে বস্তুটি গরম হয় আবার বস্তু থেকে ক্যালোরিক বের হয়ে গেলে বস্তুটি ঠাণ্ডা হয়ে দুটি ভিন্ন উষ্ণতার বস্তুকে পরস্পরের সংস্পর্শে রাখলে ওদের উষ্ণতা সমান না হওয়া পর্যন্ত উ মধ্যে ক্যালোরিকের আদান-প্রদান চলতে থাকে। এই সময় উষ্ণ বস্তু দ্বারা বর্জিত ক্যালোরিক বস্তু দ্বারা গৃহীত ক্যালোরিকের সমান হয়। কিন্তু কতকগুলি ঘটনার ফলাফল দেখে এই মতবাদ বলে প্রমাণিত হয়েছে।
কামা তুরপুন দিয়ে তাছাড়া কামানের এলো? এর কিছুদিন ঘষলে 1788 খ্রীস্টাব্দে জার্মান ইঞ্জিনিয়ার কাউন্ট রামফোর্ড লক্ষ্য করেন যে, নল ছিদ্র করার সময় ছোট ছোট উত্তপ্ত ধাতুকণা ছিটকে বের হয়ে আসে। এবং তুরপুন খুবই উত্তপ্ত হয়। এখন প্রশ্ন হলো, এই তাপ কোথা থেকে দু গলে জলে পরিণত হয়। বায়ুশূন্য স্থানে বরফ গলার জন্য যে পরিমাণ ক্যালোরিক প্রয়োজন। পরিমাণ ক্যালোরিক কোথা থেকে এলো? এই সব ঘটনার ব্যাখ্যা ক্যালোরিক মতবাদ দ্বারা করা না।
তাপের গতীয় মতবাদ ঃ
রামফোর্ড এবং ডেভি লক্ষ্য করেন, যখন দুটি বস্তুর মধ্যে ঘর্ষণ তখনই তাপ উৎপন্ন হয়। তাছাড়া ওদের মধ্যে ঘর্ষণ যত বেশী সময় ধরে করা হয়, উৎপন্ন আজ পরিমাণও তত বেশী হয়। তাই তাঁরা এই সিদ্ধান্তে এলেন যে, ঘর্ষণের ফলে যে যান্ত্রিক শক্তি ব্যাে হয় সেই যান্ত্রিক শক্তি তাপ শক্তিতে রূপান্তরিত হয়।
যান্ত্রিক শক্তি অণু-পরমাণুর গতি বৃদ্ধি কে ফলে ওদের গতি-শক্তি বৃদ্ধি পায়। অণু-পরমাণুগুলির এই বাড়তি গতি-শক্তি তাপশক্তিটি রূপান্তরিত হয়। তাই বস্তুর উষ্ণতা বেড়ে যায়। 1847 খ্রীস্টাব্দে বিজ্ঞানী জুল পরীক্ষার সাহায্যের মতবাদের সত্যতা প্রমাণ করেন। সুতরাং তাপ হল—– বস্তুকণার গতিশক্তির একটি রূপ—এ বিজ্ঞানীরা এই মতবাদ গ্রহণ করলেন।
3.3. তাপের ফল (Effects of Heat)
তাপ প্রয়োগের ফলে পদার্থের ভৌত ধর্মের এবং কোন কোন ক্ষেত্রে রাসায়নিক ধর্মেই পরিবর্তন ঘটে।
(i) উষ্ণতার পরিবর্তন : তাপ প্রয়োগের ফলে বস্তুর উষ্ণতা বৃদ্ধি পায়, আবার তাপ বের ক নিলে বস্তুর উষ্ণতা কমে যায়। শুধুমাত্র পদার্থের অবস্থার পরিবর্তনের সময় বস্তুর উষ্ণতার বে পরিবর্তন হয় না।
(ii) অবস্থার পরিবর্তন : তাপ প্রয়োগ করলে বা তাপ বের করে নিলে পদার্থের অবস্থ পরিবর্তন হয়। যেমন, তাপ প্রয়োগে কঠিন পদার্থ তরলে এবং তরল পদার্থ বাষ্পে পরিণত আবার তাপ বের করে নিলে বাষ্পীয় পদার্থ তরলে এবং তরল কঠিনে পরিণত হয়। অবশ্য ক’ আয়োডিন, ন্যাপথালিন, নিশাদল প্রভৃতি কঠিন পদার্থে তাপ প্রয়োগ করলে ঐগুলি তরু পরিণত না হয়ে সরাসরি এক ধাপে বাষ্পে পরিণত হয়। 2
(iii) রাসায়নিক পরিবর্তন ঃ তাপ প্রয়োগের ফলে অনেক সময় পদার্থের রাসায়নিক পরিব ঘটে। যেমন, কয়লাকে উত্তপ্ত করলে, কয়লার কার্বন বাতাসের অক্সিজেনের সঙ্গে যুক্ত হয়ে ডাই-অক্সাইড গ্যাস উৎপন্ন করে। ক
(iv) আয়তন পরিবর্তন ঃ তাপ প্রয়োগে বস্তুর আয়তন বেড়ে যায়, আবার তাপ বের করে বস্তুর আয়তন কমে যায়। অবশ্য এই নিয়মের কিছু ব্যতিক্রম দেখা যায়। যেমন, ঢালাই লে বরফ, বিসমাথ ধাতু, অ্যান্টিমনি, পিতল প্রভৃতির উপর তাপ প্রয়োগ করলে ওদের আয়তন যায়।
(v) চৌম্বক ধর্ম এবং বৈদ্যুতিক ধর্মের পরিবর্তন ঃ একটি চুম্বকের উপর তাপ প্রয়োগ করলে চৌম্বক ধর্ম লোপ পায়। আবার তাপ প্রয়োগে ধাতব পরিবাহীর বৈদ্যুতিক রোধ বৃদ্ধি পায়। (vi) আলোকের উৎপত্তি : অনেক সময় বস্তুর উপর অতিরিক্ত তাপ প্রয়োগে আলোক শক্তির সৃষ্টি হয়।
সরু প্ল্যাটিনাম তারের মধ্য দিয়ে তড়িৎ চালনা করলে প্রথমে তারটি গরম হয় পরে ঋত-তপ্ত হয়ে আলো বিকিরণ করে। তাছাড়া দাহ্য বস্তুতে তাপ প্রয়োগ করলে বস্তুর দহনের ফলে মালোক উৎপন্ন হয়।
( (vii) দহন : সকলেই জানি তাপের দাহিকা শক্তি আছে। কাঠ, কয়লা, কাগজ, কেরোসিন, পট্রোল প্রভৃতি পদার্থে তাপ প্রয়োগ করলে বাতাসের সংস্পর্শে জ্বলে ওঠে। (viii) প্রাণনাশ ঃ অতিরিক্ত তাপ প্রয়োগে উদ্ভিদ অথবা প্রাণী—সমস্ত জীব জগতের বিনাশ
. তাপের প্রকারভেদ (Different Kinds of Heat) য তাপকে সাধারণতঃ তিনভাবে দেখা যায়
(i) বোধগম্য তাপ (Sensible heat), (ii) লীন তাপ (Latent heat) এবং (WF) বিকীর্ণ তাপ Radiant heat)।
(i) বোধগম্য তাপ ঃ কোন বস্তুর উপর তাপ প্রয়োগ করলে বস্তুর উষ্ণতা বেড়ে যায়। আবার পস্তু থেকে তাপ বের করে নিলে বস্তুর উষ্ণতা কমে যায়। বস্তুর উষ্ণতার এই পরিবর্তন সাহায্যে মাপা যায়। এই ধরনের তাপকে বোধগম্য তাপ বলে।
(ii) লীন তাপ ঃ যে তাপ বস্তুর উষ্ণতার কোন পরিবর্তন না ঘটিয়ে শুধুমাত্র অবস্থার পরিবর্তন সেই তাপকে লীন তাপ বলে। এই তাপকে থার্মোমিটারের সাহায্যে মাপা যায় না। যেমন,
রিফ গলনের লীন তাপ, বাষ্পীভবনের লীন তাপ প্রভৃতি।
(iii) বিকীর্ণ তাপ ঃ যে তাপ জড় মাধ্যমের সাহায্য ছাড়া বা জড় মাধ্যম থাকলে তাকে উত্তপ্ত করে এক স্থান থেকে অন্য স্থানে সঞ্চালিত হয়, সেই তাপকে বিকীর্ণ তাপ বলে। অর্থাৎ যে তাপ কোন উৎস থেকে বিকিরণ পদ্ধতিতে সঞ্চালিত হয়, তাকে বিকীর্ণ তাপ বলে। আমরা সূর্য থেকে যে পাই, তা বিকীর্ণ তাপের উদাহরণ।
. উষ্ণতা বা তাপমাত্রা (Temperature)
প্রকৃতিতে সব বস্তুর মধ্যেই কিছু-না-কিছু তাপ আছে। অনেক সময় দুটি ভিন্ন বস্তুকে স্পর্শ করে কোন্টি গরম এবং কোন্টি ঠাণ্ডা তা বুঝতে পারি। যে বস্তুটি গরম বোধ হয় তার উষ্ণতা বেশি এবং যে বস্তুটি ঠাণ্ডা বোধ হয় তার উষ্ণতা কম একথা আমরা বলে থাকি। সুতরাং কোন বস্তু কি পরিমাণ তার মাত্রা প্রকাশ করতে উষ্ণতা কথাটি ব্যবহার করা হয়।
P বেশী তার অবস্থার পরিবর্তন না ঘটলে তাপ প্রয়োগে বস্তুর উষ্ণতা বৃদ্ধি পায় আবার তাপ বের করে নিলে স্তুর উষ্ণতা কমে যায়। কাজেই তাপকে যদি কারণ বলা যায় তাহলে উষ্ণতা হল তার ফল। দুটি বস্তুকে পরস্পরের সংস্পর্শে রাখলে ওদের মধ্যে তাপের আদান-প্রদান হয়।
তাপ ও উষ্ণতা প্রশ্ন উত্তর Study Learn
যে বস্তুর উষ্ণতা বেশী তাপ সবসময় সেই বস্তু থেকে অন্য বস্তুটির দিকে প্রবাহিত হয়। বস্তু দুটির উষ্ণতা না হওয়া পর্যন্ত এই তাপের আদান-প্রদান চলতে থাকে। যেমন, একটি ছোট লোহার বলকে তপ্ত করে এক বালতি ঠাণ্ডা জলে ফেললে দেখা যাবে তাপ বর্জন করে বলের উষ্ণতা কমে য় এবং তাপ গ্রহণ করে জলের উষ্ণতা বাড়ে। উভয়ের উষ্ণতা যখন সমান হয় তখন ওদের মধ্যে আদান-প্রদান বন্ধ হয়।
এক্ষেত্রে জলের মোট তাপের পরিমাণ লোহার বলটির তাপের পরিমাণের চেয়ে বেশী হলেও বলের উষ্ণতা জলের চেয়ে বেশী হওয়ায় লোহার বল থেকে তাপ প্রবাহিত হয়। কাজেই দেখা গেল, বেশী উষ্ণতাবিশিষ্ট বস্তু থেকে তাপ সবসময় কম বস্তুর দিকে প্রবাহিত হয়।
অর্থাৎ তাপের প্রবাহ কোন্ দিকে হবে উষ্ণতাই তা স্থির উষ্ণতা বা তাপমাত্রার
উষ্ণতার সংজ্ঞা :
তাপমাত্রা বা উষ্ণতা বস্তুর এমন একটি তাপীয় অবস্থা যাথেকে তাপ সঞ্চালনের অভিমুখ স্থির করে অর্থাৎ ঐ বস্তুটিকে অন্য একটি বস্তুর সংস্পনে বস্তুটি অন্য বস্তুকে তাপ দেবে না অন্য বস্তু থেকে তাপ নেবে তা স্থির করে। দুটি বস্তুর উষ্ণতা সমান হলেও ওদের মধ্যে তাপের পরিমাণ ভিন্ন হতে পারে। এক বালতি জল থেকে এক কাপ জল তুলে নিলে বালতি এবং কাপের জলের উষ্ণতা সমান হয়।
কিন্তু বা জলের মধ্যে মোট তাপের পরিমাণ কাপের জলের তাপের চেয়ে অনেক বেশী। তাই রেখে কাপের জল বালতির জলের চেয়ে বেশী তাড়াতাড়ি ঠাণ্ডা হয়ে যায়। আবার দুটি বস্তুর মধে উষ্ণতা বেশী তার মোট তাপের পরিমাণ অন্য বস্তুটির চেয়ে কম হতে পারে।
যেমন, একটি ি দেশলাই কাঠির উষ্ণতা এক বালতি ফুটন্ত জলের চেয়ে অনেক বেশী। কিন্তু দেশলাই কাঠির তাপ এক বালতি ফুটন্ত জলের মোট তাপের চেয়ে অনেক কম জলের পরিমাণের সঙ্গে তাপের পরিমাণের তুলনা করলে উষ্ণতাকে জলের উপরতলে, হবে।
দুটি পাত্রকে স্টপককযুক্ত নল দিয়ে যোগ করে পাত্র দুটিতে একই পরিমাণ জল ঢালা হল। সরু পাত্রের জলের উপর তলের উচ্চতা মোটা পাত্রের চেয়ে বেশী হবে। এই অবস্থায় স্টপককটি খুলে দিলে সরু পাত্র থেকে জল মোটা পাত্রের দিকে প্রবাহিত হয়। যতক্ষণ পর্যন্ত উভয় পাত্রের জলতলের উচ্চতা সমান না হয় ততক্ষণ এই জলপ্রবাহ চলতে থাকে।
এমনকি সরু পাত্রে জলের পরিমাণ কম থাকলেও ঐ পাত্রের জলতলের উচ্চতা বেশী হলে জল ঐ পাত্র থেকে মোটা পাত্রের দিকে প্রবাহিত হবে। অর্থাৎ জলপ্রবাহের দিক জলের পরিমাণের উপর নির্ভর করে না, জলপ্রবাহ ঈলের প্রবাহ জলতলের উচ্চতার উপর নির্ভর করে।
এদিক দিয়ে চিত্র–3.1 : জল-প্রবাহের সঙ্গেতাপ-প্রবাহের সাদৃশ্য মোট তাপের পরিমাণের উপর দেখলে তাপপ্রবাহ বস্তুর নির্ভর করে না, উষ্ণতার উপর নির্ভর করে। দুটি ভিন্ন উষ্ণতার বস্তুকে পরস্পরের সংস্পর্শে রা বেশী উষ্ণতাবিশিষ্ট বস্তু থেকে তাপ কম উষ্ণতাবিশিষ্ট বস্তুর দিকে প্রবাহিত হয়। বস্তু দুটির উে সমান হলে তাপপ্রবাহ বন্ধ হয়। উচ্চতা
তাপ এবং উষ্ণতার পার্থক্য
তাপ
(i) তাপ এক প্রকার শক্তি—যা গ্রহণ করলে বস্তু গরম হয় এবং বর্জনে বস্তু ঠাণ্ডা হয়।
(ii) তাপ হল উষ্ণতার কারণ— তাপ গ্রহণে বস্তুর উষ্ণতা বাড়ে, আবার বর্জনে বস্তুর উষ্ণতা কমে।
(iii) ক্যালোরিমিটার যন্ত্রের সাহায্যে বস্তুর মধ্যে তাপের পরিমাণ মাপা হয়।
(iv) সি.জি.এস. এবং এস.আই পদ্ধতিতে তাপের একক হল যথাক্রমে ক্যালোরি এবং জুল
(v) দুটি বস্তুর মধ্যে তাপের পরিমাণ বিভিন্ন হলেও বস্তু দুটির উষ্ণতা সমান হতে পারে।
(vi) তাপের প্রবাহ বস্তু-মধ্যস্থ তাপের পরিমাণ দ্বারা নিয়ন্ত্রিত হয় না।
(vii) বস্তু-মধ্যস্থ তাপকে কোন পাত্রে রাখা জলের পরিমাণের সঙ্গে তুলনা করা যায়।
উষ্ণতা
(i) উষ্ণতা হল তাপশক্তির প্রকাশ। উষ্ণতা লাভ কোন বস্তুর তাপীয় অবস্থা বোঝায়। (ii) উষ্ণতা হল তাপের ফল।
(iii) থার্মোমিটার যন্ত্রের সাহায্যে বস্তুর উষ্ণতা ম হয়।
(iv) এস আই পদ্ধতিতে উষ্ণতার একক ডিগ্রীণে (°K)। সি · জি· এস পদ্ধতিতে উষ্ণতার একটি
(v) দুটি বস্তুর মধ্যে তাপের পরিমাণ এক হলেও দুটির উষ্ণতা বিভিন্ন হতে পারে। (vi) তাপ-প্রবাহ বস্তুর উষ্ণতা দ্বারা নিয়ন্ত্রিত ই
(vii) বস্তুর উষ্ণতাকে কোন পাত্রে রাখা জলখা উচ্চতার সঙ্গে তুলনা করা যায়।
. উষ্ণতার পরিমাপ (Measurement of Temperature)
কোন বস্তুর উষ্ণতার সঠিক এবং সূক্ষ্ম পরিমাপের জন্য যন্ত্রের সাহায্য নেওয়া হয়। থার্মোমিটার বা তাপমান যন্ত্র (Thermometer) : যে যন্ত্রের সাহায্যে কোন বস্তুর উষ্ণতা এবং সূক্ষ্মভাবে মাপা যায়, তাকে থার্মোমিটার যা তাপমান যন্ত্র বলে।
বস্তুর উষ্ণতা পদার্থের একটি ধর্ম। তাই পদার্থের যে সব ভৌত ধর্ম ষ্ণতার পরিবর্তনের সঙ্গে একইভাবে পরিবর্তিত হয় সেই সব ধর্ম ব্যবহার রে বস্তুর উষ্ণতা মাপা হয়। এইজন্য থার্মোমিটার অনেক রকমের হয়। যে র্মোমিটারে পারদ ব্যবহার করা হয়, তাকে পারদ থার্মোমিটার বলে।
পারদ থার্মোমিটার ঃ পারদ থার্মোমিটার একটি সর্বত্র সমান ব্যাসের সূক্ষ্ম কাচনল দ্রবিশিষ্ট শক্ত কাচের নল। নলের এক প্রান্তে কাচের একটি পাতলা চাঙাকৃতি বাল্ব থাকে এবং অন্য প্রান্তটি বন্ধ থাকে। এই বাল্বটি সম্পূর্ণরূপে বং নলের কিছু অংশ পারদে ভর্তি থাকে। নলটির বাকী অংশে খুব সামান্য রিমাণ পারদ বাষ্প ছাড়া আর কিছুই থাকে না।
উষ্ণতা মাপার জন্য নলটির গায়ে একটি তাপমাত্রার স্কেল আঁকা থাকে। যে বস্তুর উষ্ণতা মাপা দরকার সই বস্তুর সংস্পর্শে থার্মোমিটারের বাল্বটি রাখা হয়। এর ফলে বস্তু থেকে গপ সংগ্রহ করে বাল্বের মধ্যস্থিত পারদের আয়তন বৃদ্ধি পায় এবং পারদ গচের সরু নল বেয়ে উপরে উঠতে থাকে। বস্তু এবং পারদের উষ্ণতা সমান
লে পারদের প্রসারণ বন্ধ হয় এবং এই অবস্থায় নলের মধ্যে পারদ সূত্র
= থার্মোমিটারের গায়ে আঁকা স্কেলের যে দাগে স্থির থাকে তা দেখে বস্তুটির
উষ্ণতা জানা যায়। লক্ষ্য করলে দেখা যাবে, থার্মোমিটারের কাচনলের সর্বোচ্চ দাগের উপর একটি ছোট বাল্ব আছে। কোন কারণে চিত্র—3.2: পারদ বাল্বটির উষ্ণতা বেশী হলে পারদ সূত্র তখন সর্বোচ্চ দাগ থার্মোমিটার
ছাড়িয়ে যায় এবং পারদ ঐ ছোট বাল্বের মধ্যে এসে জমা হয়, তা না হলে বেশী উষ্ণতায় পারদের রূপে থার্মোমিটারটি ভেঙ্গে যেতে পারে।
তাপ ও উষ্ণতা প্রশ্ন উত্তর Study Learn
থার্মোমিটারে পারদ ব্যবহারের সুবিধে :
থার্মোমিটারে অন্যান্য তরলের চেয়ে পারদ ব্যবহার রার কতকগুলি বিশেষ সুবিধা আছে—
(i) উষ্ণতার পরিবর্তনের সঙ্গে পারদের আয়তনের কারিবর্তন খুবই নিয়মিত (regular) এবং যথেষ্ট বেশী।
(ii) পারদের তাপগ্রাহিতা কম। তাই কোন স্ত থেকে অন্য তরলের তুলনায় পারদ খুব কম তাপ গ্রহণ করে। ফলে বস্তুর উষ্ণতার বিশেষ তারতম্য হয় না।
(iii) পারদ অস্বচ্ছ এবং চকচকে বলে বাইরে থেকে নলের ভেতরে পারদের অবস্থান সহজেই বোঝা যায়। ফলে উষ্ণতা পাঠের সুবিধে হয়।
(iv) বিশুদ্ধ পারদ কাচ ভিজায় না। তাই জল ও অন্যান্য তরলের মত পারদ কাচনলের গায়ে লেগে থাকে না। ফলে নলের মধ্যে পারদ ওঠানামা করতে পারে
। (v) পারদ সহজেই বিশুদ্ধ অবস্থায় পাওয়া যায়। (
vi) একই পরিমাণ উষ্ণতা বৃদ্ধির জন্য পারদের আয়তন-প্রসারণ অন্যান্য তরলের চেয়ে বেশী হয়। ফলে পারদ থার্মোমিটার দিয়ে বস্তুর উষ্ণতা সূক্ষ্মভাবে মাপা যায়।
(vii) তাপের সুপরিবাহী বলে পারদ দ্রুত শরীক্ষাধীন বস্তুর উষ্ণতা লাভ করে। (viii) পারদের হিমাঙ্ক – 39°C এবং স্ফুটনাঙ্ক 357°C) সুতরাং এই বিস্তীর্ণ পাল্লার মধ্যে পারদ তরল অবস্থায় থাকে। তাই এই পাল্লার মধ্যে যে কোন নেতা পারদ থার্মোমিটার দিয়ে মাপা যায়।
(ix) অন্যান্য তরলের তুলনায় পারদ কম উদ্বায়ী। তাই শূন্যস্থানে খুব সামান্য পরিমাণ পারদ বাষ্প থাকে।
তাপ ও উষ্ণতা
তাপ ও উষ্ণতা প্রশ্ন উত্তর Study Learn