ডাকাতের-মা-বড়-প্রশ্ন-উত্তর-খুব-গুরুত্বপূর্ণ-প্রশ্নোত্তর
Bengali

ডাকাতের মা বড় প্রশ্ন উত্তর খুব গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্নোত্তর

ডাকাতের মা বড় প্রশ্ন উত্তর খুব গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্নোত্তর

ডাকাতের মা বড় প্রশ্ন উত্তর

ডাকাতের মা প্রশ্ন উত্তর

ডাকাতের মা

সতীনাথ ভাদুড়ী (১৯০৬-১৯৬৫,

ডাকাতের মা: প্রশ্নঃ ‘কী কপাল নিয়ে এসেছিল।”—বক্তার এরূপ উক্তির কারণ ‘ডাকাতের মা’ গল্প অবলম্বনে লেখো। উত্তর

উত্তরঃ

ডাকাতের মা: প্রখ্যাত কথাসাহিত্যিক সতীনাথ ভাদুড়ীর ‘ডাকাতের মা’ ছোটোগল্প থেকে নেওয়া এই উদ্ধৃতিটি প্রকৃতপক্ষে ডাকাতসর্দার সৌখীর প্রৌঢ়া বিধবা মায়ের ভাবনা।

ডাকাতের-মা-বড়-প্রশ্ন-উত্তর-খুব-গুরুত্বপূর্ণ-প্রশ্নোত্তর

সৌখীর দ্বিতীয় পক্ষের স্ত্রীর একমাত্র পুত্রসন্তান যখন জন্মগ্রহণ করে, তখন সৌখী জেলে। সৌখীর অনুচরেরা প্রথম দু-বছর ধরে প্রতি মাসে তার পরিবারকে টাকা পাঠালেও পরবর্তীকালে টাকা দেওয়া সম্পূর্ণ বন্ধ করে দেয়। এমনিতেই সৌখীর দ্বিতীয় স্ত্রীর শরীর শীর্ণ ছিল, তার ওপর ছেলে ধকল এবং চরম আর্থিক অনটন তাকে আরও রুগ্ণা করে তোলে|
এই চরম অর্থকষ্ট ঘোচানোর জন্য সৌখীর বউ যে খেটে অর্থ উপার্জন করবে, তাও সম্ভব নয়| রুগ্ণ শরীর নিয়ে সৌখীর দ্বিতীয় স্ত্রীর পক্ষে পরিশ্রম করা কার্যত অসম্ভব ছিল। আবার জাতে গোয়ালা বলে সৌখীর মায়ের পক্ষে ঝিচাকরের কাজ করাও সম্ভব ছিল না। তা ছাড়া, পরিচারিকার কাজ করতে চাইলেও ডাকাতসর্দার সৌখীর মা-বউকে কেউ বিশ্বাস করত না।
তাই বাধ্য হয়েই সৌখীর মা তার নাতি ও পুত্রবধূকে বেয়াইয়ের বাড়িতে পাঠিয়ে দিয়ে নিজে খই-মুড়ি বিক্রি করে কোনোমতে পেট চালাতে থাকে। দারিদ্র্যপীড়িত নাতির মন্দভাগ্যের কথা স্মরণ করে ঠাকুমা ভাবে, “যার বাপের নামে চৌকিদারসাহেব কাঁপে, দারোগাসাহেব পর্যন্ত যার বাপকে তুইতোকারি করতে সাহস করেননি কোনোদিন, তারই কিনা দু-বেলা ভাত জোটে না।
” তাই জন্মের পর থেকে বাবাকে না-দেখা, চরম দারিদ্র্যের জন্য মা-সহ দাদুর বাড়িতে থাকা নাতির সম্বন্ধে ঠাকুমার এমন ভাবনা অত্যন্ত স্বাভাবিক।

প্রশ্ন- “ওরা কি ডাকাত দলের যুগ্যি;”—বক্তার এ কথা বলার কারণ বিশ্লেষণ করো।

উত্তর

সতীনাথ ভাদুড়ীর ‘ডাকাতের মা’ ছোটোগল্প থেকে গৃহীত এই উদ্ধৃতিটি সৌখীর মায়ের। সৌখীর অনুচরদের আচরণের জন্যই ‘ডাকাতের মা’ এমন ভাবনা ভাবতে বাধ্য হয়েছে। সৌখীর বাবার আমলের এক ডাকাত যখন আহত হয়ে ধরা পড়ে, তখন সে নিজের হাতেই নিজের জিভ কেটে ফেলেছিল—যাতে দলের গোপন কথা পুলিশের কাছে বেরিয়ে না পড়ে।
সৌখীর দলে কিন্তু এমন বিশ্বাসী এবং দল-অন্ত-প্রাণ অনুচর নেই | অনুচররা প্রথম দু-বছর নিয়মমতো তার মাকে মাসে মাসে টাকা পাঠালেও পরবর্তীতে টাকা পাঠানো একেবারে বন্ধ করে দেয়। সৌখীর বাবার আমলে এমনটা কিন্তু কল্পনাও করা যেত না | এমনকি সৌখীর আমলেও আগে এমনটা ঘটেনি।
দুঃখদারিদ্র্যে জর্জরিত, একাকী, প্রৌঢ়া বিধবা তাই হতাশ হয়ে সৌখীর অনুচরদের ‘বদলোক’, ‘একলঘেঁড়ে লোক’ বলে অভিহিত করেছে। সৌখী জেলে থাকাকালে তার এক অনুচর সৌখীর মাকে টাকা দিতে আসত | তার চিবুকের নীচে ছিল দু-গাছা দাড়ি | সৌখীর মার চোখে তার চেহারাটা ছিল ঠিক যেন তালপাতার সেপাইয়ের তো|
কালিঝুলি মেখে হাতে মশাল নিয়ে থাকলেও তাকে দেখে যে, কোনো লোকই ভয় পাবে না তা বলাই যায়। সুতরাং কী চেহারায়, কী মানসিকতায় সৌখীর মার চোখে ওরা মোটেই ডাকাত হওয়ার যোগ্য নয়—বরং ‘চোর ছিঁচকে চোর’ হওয়ারই যোগ্য।

প্রশ্নঃ “মা তখনও মেঝেতে পড়ে ডুকরে কাঁদছে।”—কার মায়ের কথা বলা হয়েছে? মায়ের কান্নার কারণ আলোচনা করে বুঝিয়ে দাও।

উত্তর

সতীনাথ ভাদুড়ীর ‘ডাকাতের মা’ ছোটোগল্পের ডাকাতসর্দার সৌখীর মায়ের কথা এখানে বলা হয়েছে।

পাঁচ বছর জেল খেটে একদিন রাতে আচমকা সৌখী বাড়ি ফিরে আসে। পরদিন পর্যন্ত তার মা মেঝেতে পড়ে ডুকরে কাঁদতে থাকে।

সকালে ছেলেকে কী খেতে দেবে—সেই চিন্তায় অস্থির সৌখীর মা পয়সা জোগাড়ের জন্যই মাঝরাতে মাতাদিন পেশকারের বাড়ি থেকে তাদের দামি ঘটিটা চুরি করে। পরদিন সকালে বাসনের দোকানে চোদ্দো আনা পয়সায় বিক্রি করে সেটা তা দিয়ে প্রয়োজনীয় রান্নার উপকরণগুলি কিনে আনে সে |
সকালে যখন সে আলুচ্চড়ি রান্না করছিল, তখনই বাসনওয়ালা ও পেশকারসাহেব-সহ দারোগাসাহেব তাদের বাড়িতে তদন্তের জন্য উপস্থিত হয় পুলিশি জেরার হাত থেকে মাকে রক্ষা করার জন্য সৌখী তার মায়ের অপরাধ নিজের কাঁধে নিয়ে নেয়।
মায়ের স্বীকারোক্তি এবং কাতর অনুরোধ উপেক্ষা করে দারোগাবাবু তার ছেলেকে নিয়ে চলে যাবার অনেকক্ষণ পর

সৌখীর মা কেঁদেছিল প্রধানত তিনটি কারণে। প্রথমত, পাঁচ বছর ধরে জেল খেটে সৌখী বাড়ি ফিরলেও নিজের বউ এবং তখনও পর্যন্ত না-দেখা পাঁচ বছরের ছেলেকে একবারের জন্যও দেখতে পায়নি সে।
দ্বিতীয়ত, ছেলের প্রিয় আলুচ্চড়ি ও ভাতও তাকে রান্না করে খাওয়ানোর সুযোগ হয়নি তার। তৃতীয়ত, সামান্য চোদ্দো আনা পয়সার জন্য ছিঁচকে চুরি করে সে যে তার স্বামী-পুত্রের ডাকাতবংশের মুখে কালি ছিটিয়েছে—সেই দুঃখেও সে কেঁদে ফেলে।

প্রশ্নঃ ডাকাতের মা’ ছোটোগল্প অবলম্বনে সৌখীর মায়ের চরিত্র বিশ্লেষণ করো।

উত্তরঃ

‘ডাকাতের মা’ ছোটোগল্পের প্রধান চরিত্র সৌখীর মা চরিত্রটির বৈশিষ্ট্যগুলি হল

অপত্যস্নেহ:
পুত্রের চিন্তাভাবনা, আচার-আচরণের প্রতি সৌখীর মার যেমন পূর্ণ সমর্থন ছিল, তেমনি মেজাজি ডাকাত সর্দারের মা হিসেবে তার যথেষ্ট গর্বও ছিল।
পুত্রের প্রতি তার সম্ভ্রম ও স্নেহ—দুই–ই প্রবল ছিল বলেই পুত্রকে সে নিজের দুর্বিষহ দারিদ্র্যের কথা যেমন জানাতে পারেনি, তেমনই তাকে আলুচচ্চড়ি-ভাত খাওয়াতে ছিঁচকে চুরির মতো মর্যাদাহানিকর কাজে হাত দিতেও কুণ্ঠাবোধ করেনি।

পুত্রবধূর প্রতি স্নেহপরায়ণতা:
দুর্বল চেহারার পুত্রবধূর উপযুক্ত পরিচর্যার জন্য সে বাধ্য হয়েই নাতি-সহ বউমাকে তার বেয়াই বাড়িতে পাঠিয়ে দিয়েছিল।

শ্রমশীলতা:
সৌখীর মা অত্যন্ত পরিশ্রমী মহিলা ছিল। তাই সৌখীর অনুচররা তার জেলে যাওয়ার দু-বছর পর টাকা দেওয়া বন্ধ করে দিলে সে বাড়ি বাড়ি খই-মুড়ি বিক্রি করে নিজের পেট চালিয়ে নিয়েছে।

পুরুষতন্ত্রে আস্থা:
নিরক্ষর সৌখীর মা পুরুষের আধিপত্যকে শিরোধার্য করে নিয়েছিল। তাই সে বলে, “বাপের বেটা, তাই মেজাজ অমন কড়া।” পুত্রের প্রহার বা শাসানিও তাই তাকে বিচলিত করেনি।

বাস্তববুদ্ধি:
jসৌখীর মার যথেষ্ট বাস্তববুদ্ধি থাকার জন্য দীর্ঘদিন পর ছেলে বাড়ি ফিরলে সেই মুহূর্তেই সে তার ছেলেকে তার ডাকাত-অনুচরদের

স্বার্থপরতার কথা অথবা তার স্ত্রী-পুত্রের অসুস্থতার কথা জানায়নি।

এসব সত্ত্বেও তার একটা আবেগতড়িত ভুল-সিদ্ধান্তের জন্যই গল্পটি বিষাদময় পরিসমাপ্তির দিকে এগিয়ে গিয়েছে।

প্রশ্নঃ “এতক্ষণে বোঝে সৌখী ব্যাপারটা।”—কোন্ ব্যাপারটার কথা বলা হয়েছে? সে কীভাবে এই ব্যাপারটা বুঝতে পেরেছিল, তা আলোচনা করো।

উত্তর

সতীনাথ ভাদুড়ীর ‘ডাকাতের মা’ গল্পের সৌখীর মা যে চোদ্দো আনা পয়সার

জন্য লোটা চুরি করেছে—সেই ব্যাপারটাই সৌখী বুঝতে পেরেছিল। → ডাকাতসর্দার সৌখী জেল থেকে প্রায় পাঁচ বছর পর, নির্দিষ্ট মেয়াদের আগেই ছাড়া পেয়ে একদিন রাতে তার বাড়ি ফিরে আসে। তার স্ত্রী এবং নাদেখা শিশুপুত্র তার শ্বশুরবাড়িতে থাকায় তার বিধবা মার সঙ্গেই কেবল দেখা হয়।
সে-রাতে খাওয়া-দাওয়া করে সে তার বিধবা মাকে জেল থেকে আনা নতুন কম্বলটা দিয়ে নিজে মার পুরোনো কম্বলটা নিয়ে শুয়ে পড়ে অনেক বেলা অবধি ঘুমোনোর ইচ্ছা নিয়ে |
কিন্তু সকালবেলায় হই-হট্টগোল শুনে সে বাইরে বেরিয়ে এসে দেখে যে, পাড়ার মাতাদিন পেশকারের লোটা চুরির তদন্ত করতে পেশকারসাহেব বাসন-বিক্রেতাকে এবং থানার দারোগাসাহেবকে নিয়ে তাঁদের বাড়িতে এসে উপস্থিত হয়েছেন।
তার মা এই অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনায় এতটাই হতবুদ্ধি হয়ে যায় এবং ডাকাতসর্দারের মা হয়েও লোটা-চুরির অভিযোগে এতটাই লজ্জিত হয়ে পড়ে যে, চুরির অভিযোগ অস্বীকার করতে পর্যন্ত ভুলে যায় |
দারোগাসাহেব একটা লোটা দেখিয়ে যখন সৌখীর মাকে সেটি বাসনওয়ানাকে চোদ্দো আনায় বিক্রি করার কথা জিজ্ঞাসা করে, তখন সৌখীর মায়ের মুখ থেকে কোনো কথা বেরোয় না | শুধু একবার ছেলে সৌখীর দিকে তাকিয়ে মাথা হেঁট করে নেয় সে। এসবকিছু দেখেশুনেই সৌখী সমস্ত ‘ব্যাপারটা’ বুঝতে পেরেছিল |

প্রশ্নঃ “কিন্তু আজ যে ব্যাপার অন্য।”—কোন্ দিনটার কথা বলা হয়েছে? সেদিনের অন্য ব্যাপারটির পরিচয় দাও।

• উত্তর

সতীনাথ ভাদুড়ীর ‘ডাকাতের মা’ ছোটোগল্পে সৌখীর মা যেদিন ভোররাতে ঘটি চুরি করেছিল, সেই দিনটার কথাই এখানে বলা হয়েছে |

→ জেল থেকে হঠাৎ ছাড়া পেয়ে সৌখী গভীর রাতে ফিরে আসে। পরদিন সকালে ছেলেকে কী খেতে দেবে, বাড়িতে সেই চিন্তায় বিছানায় শুয়ে অস্থির হয়ে পড়ে সৌখীর কপর্দকশূন্য মা। সকালে সৌখীকে তার প্রিয় আলুচ্চড়ি-সহ ভাত খাওয়াতে হলে যে আলু, চাল, তেল—সবই তাকে কিনতে হবে।
তাই অনন্যোপায় হয়ে সৌখীর মা মাঝরাতে প্রতিবেশী মাতাদিন পেশকারের দরজার বাইরে থেকে তার দামি ঘটিটা চুরি ক’রে ভোরবেলা বাসনের দোকানে সেটি চোদ্দো আনা পয়সায় বিক্রি করে দেয়। সকালে যখন সৌখী বিছানায় নিশ্চিন্তে ঘুমাচ্ছিল এবং তার যা উনুনে আলুচ্চড়ি চাপিয়েছিল— তখনই সেই বাসনওয়ালা এবং পেপকারসাহেব-সহ দারোগা-পুলিশ এসে উপস্থিত হয় তাদের বাড়ি।

তাদের দেখে বুড়ির বুক কেঁপে ওঠে। ডাকাতসর্দারের বিধবা এবং ডাকাতসর্দারের মা হিসেবে পুলিশকে তার ভয় পাওয়ার কারণ নেই। এর আগে অনেকবারই পুলিশ তাদের বাড়ি হানা দিয়েছে। কিন্তু আজ তার সদ্য ছিঁচকে চুরির সাক্ষী-প্রমাণ-সহ বাড়িতে পুলিশের আগমন ঘটেছে। তাই সেই দিনটিতে পুলিশ দেখে নিজের ও পরিবারের সম্মান হারানোর ভয়ে বুক কেঁপে উঠেছিল বুড়ির।

প্রশ্ন ….ছেলের নামে কলঙ্ক এনেছে সে।” –কে ছেলের নামে কলঙ্ক এনেছে? ‘কলঙ্ক’ শব্দটি ব্যবহারের কারণ কী?

উত্তর

সতীনাথ ভাদুড়ীর ‘ডাকাতের মা’ ছোটোগল্প থেকে সংকলিত এই উদ্ধৃতিটিতে ডাকাতসর্দার সৌখীর মায়ের ‘ছেলের নামে কলঙ্ক’ আনার কথা বলা হয়েছে।

→» জেল থেকে হঠাৎ বাড়ি-ফিরে-আসা ছেলে ডাকাতসর্দার সৌখীকে পরদিন সকালে খাওয়ানোর জন্য তার কর্পদকশূন্য মা ভোররাতে প্রতিবেশীর বাড়ি থেকে লোটা চুরি করে। কিন্তু সকালবেলাতেই সেই ছিঁচকে চুরির সাক্ষীপ্রমাণ-সহ পুলিশের আগমন ঘটলে লজ্জায় ও অপমানে ‘বুড়ির বুক কেঁপে ওঠে’ |
এই সময় সবকিছু অনুধাবন করে সৌখী যখন মাকে বাঁচাতে ছিঁচকে চুরির দায় নিজের ঘাড়ে নেয়, তখনই সৌখীর যা এই কথা বলে ভেঙে পড়ে, ‘…ছেলের নামে কলঙ্ক এনেছে সে।”

ডাকাতসর্দারের বিধবা এবং ডাকাতসর্দারের হিসেবে সৌখীর মা গর্বিতই ছিল। কারণ সে মনেপ্রাণে বিশ্বাস করে, “ডাকাতি করা তার স্বামী-পুত্রের হকের পেশা। সে তো মরদের কাজ; গর্বের জিনিস |
জেলে যাওয়া সেক্ষেত্রে দুরদৃষ্ট মাত্র।” তা ছাড়া, তার পুত্র ডাকাতসর্দার হিসেবে এতটাই গর্বিত ছিল যে, কারাবাসকালে সে কখনও ছিঁচকে ‘কদুচোর’দের সঙ্গে, এমনকি ছোটোখাটো অপরাধীদের সঙ্গেও পারতপক্ষে কথা বলত না। তার ‘নামে চৌকিদারসাহেব কাঁপে’, দারোগাসাহেব পর্যন্ত তাকে ‘তুইতোকারি করতে সাহস করেননি কোনোদিন’|
ছেলের সেই উচ্চ ভাবমূর্তি তার দোষে কালিমালিপ্ত হয়েছিল বলেই ‘ডাকাতের মা’ ‘কলঙ্ক’ শব্দটি ব্যবহার করেছে।

প্রশ্ন – “এতক্ষণে বোঝে সৌখী ব্যাপারটা।”—–সৌখী কোন্ ব্যাপারটা কীভাবে বুঝল? এরপর তার মনোভাব কী হয়েছিল?

উত্তর

সতীনাথ ভাদুড়ীর ‘ডাকাতের মা’ গল্পে সৌখী যেদিন জেল থেকে মাঝরাতে বাড়ি ফিরে ঘুমোতে যায়। তার পরদিন সকালেই হই-হট্টগোল শুনে বাইরে বেরিয়ে সে দেখে যে, দারোগাসাহেব পেশকার ও বাসনওয়ালাকে সঙ্গে নিয়ে পাড়ার মাতাদিন পেশকারের লোটা-চুরির তদন্তে এসেছেন।
দারোগা সৌখীর মাকে লোটাটা দেখিয়ে সেটি বাসনওয়ালাকে চোদ্দো আনায় বিক্রি করেছে কি না জিজ্ঞাসা করেন। এই প্রশ্নের উত্তর না দিয়ে সৌখীর মা নীরবে তার ছেলের দিকে তাকিয়ে মাথা হেঁট করে নেয়। তখনই সৌখী বোঝে যে, সামান্য কটা পয়সার জন্য শেষপর্যন্ত তার মা লোটাটা চুরি করেছে।

● এরপরই সৌখী ভাবে যে, মা তো তাকে তার অনটনের কথা বলতেই পারত | এতদিন জেলখানার গুদামঘরের কাজের দায়িত্ব ছিল তার। জেলের

ঠিকাদারের অধীনে কাজ করে মোট নববই টাকা সে আয় করেছে। সে তাই ভাবে যে বাড়ি-ঘর-দুয়ারের দিকে তাকিয়ে. তারই বোঝা উচিত ছিল তার প্রৌঢ়া, বিধবা মায়ের অবস্থা | সেটা বুঝে মার হাতে টাকা দেওয়া উচিত ছিল তার। অবশ্য অতশত ভাবার সময় সে পায়নি।
সৌখী ভাবে, সে যে জেলে ‘লাইফার’-দের সঙ্গেই আলাপ-পরিচয় করে, ছিঁচকে ‘কচুচোর’-দের সঙ্গে পারতপক্ষে কথা বলে না—সে কথা জানা সত্ত্বেও তার মা কী করে সামান্য লোটা চুরি করতে পারল? এসব কথা ভাবার সময় যখন দারোগাবাবু তাঁর প্রশ্নের উত্তর চাইলেন সৌখীর মার কাছে, তখন আর চুপ থাকতে পারল না সৌখী। সে মায়ের সম্মান রক্ষা করার তাগিদে লোটা-চুরির দায় মাথা পেতে নেয়।
দারোগাবাবু এরপর তার মায়ের দোষ স্বীকারকে অবিশ্বাস করেন। সৌখী সে-সময় মায়ের ছিঁচকে চুরির দায় মাথায় নিয়ে তার টাকা-ভরাবটুয়াটা খাটিয়ার ওপর রেখে রওনা হয় থানার উদ্দেশে।

 

প্রশ্নঃ “এদের কাউকে দেখছি না?”—কে, কাকে কাদের কথা জিজ্ঞাসা করেছে? সৌখী তাদের দেখতে পাচ্ছে না কেন?

উত্তরঃ

সতীনাথ ভাদুড়ীর লেখা ‘ডাকাতের মা’ গল্পে মেয়াদের পূর্বে জেল থেকে ছাড় পেয়ে রাতদুপুরে বাড়ি ফিরেই সৌখী তার মাকে এ কথা জিজ্ঞাসা করেছে।

এখানে ‘এদের’ বলতে সৌখীর ছেলে, বউয়ের কথা বলা হয়েছে। সৌখীর প্রথমপক্ষের সন্তান ছিল না। তাই বোঝা যায় সন্তানের জন্য সে কতটা উদ্গ্রীব ছিল | জেলে বন্দি থাকার জন্য সে তার ছেলেকে একেবারেই দেখেনি।
এদিকে সৌখী জেলে যাওয়ার দু-বছর পর তার দলের লোকেরা তার মাকে টাকা পাঠান বন্ধ করে দিলে শিশু নাতি ও পুত্রবধূকে নিয়ে অধৈ জলে পড়ে যায় সৌখীর বিধবা মা। কোনোরকমে খই-মুড়ি বেচে সে তার নিজের পেট চালায় | আবার ডাকাতের মা বা ডাকাতের বউ বলে কেউ সাহস করে তার মতো মানুষদের ঝিয়ের কাজও দেয় না।
সৌখীর দ্বিতীয়পক্ষের বউয়ের শরীর দুর্বল, ছেলের জন্মের কারণে রুগ্ণ। তাই তাদের যত্ন না করতে পেরে সৌখীর মা তাদেরকে তার গোয়ালা বেয়াই-এর বাড়িতে পাঠিয়ে দিয়েছে। তাই সৌখী ঘরে ফিরে তাদেরকে দেখতে পায় না। এতে তার বাড়ি ফেরার আনন্দ এক মুহূর্তেই নিঃশেষ হয়ে যায় | সে মনে মনে ঠিক করে, পরের দিন সকালেই সে তার বউ-ছেলেকে আনতে যাবে।

প্রশ্ন – জেল থেকে ফিরে আসার দিন রাত্রে ছেলে সৌখীর সঙ্গে তার মায়ের যে কথোপকথন হয়েছিল, তা ‘ডাকাতের মা ছোটোগল্পে অবলম্বনে লেখো।

উত্তর

সতীনাথ ভাদুড়ীর ‘ডাকাতের মা’ ছোটোগল্পে তার আকস্মিক প্রত্যাবর্তনে আনন্দিত মাকে সৌখী জানায় লাটসাহেব জেলভ্রমণে এসে সৌখীর কাজকর্মে খুশি হয়ে তাকে ছেড়ে দেওয়ার হুকুম দিয়েছেন। এরপর সে আসল সত্যিটা জানায় যে, সে হেডজমাদারকে ঘুষ দেওয়ায় সে জেলারবাবুর কাছে তার হয়ে সুপারিশ করেছিল।
এ কারণেই সৌখীর শাস্তির মেয়াদ কমে যায়। এ কথাগুলো বলে সে মাকে কুপি জ্বালাতে বলে | কুপির আলোয় সৌখীকে রোগা লাগলে জেলে তার অসুখ-বিসুখ হয়েছিল কি না জিজ্ঞাসা করে মা। এ কথার উত্তর না দিয়ে সৌখী তার ছেলে বউকে দেখতে না পাওয়ার কারণ জিজ্ঞাসা করে সৌখীর প্রশ্নের উত্তরে তার মা মরিয়া হয়ে তাকে জানায় যে, মেয়েদেরও মাবাবাকে দেখতে ইচ্ছা করে।
মার এ কথায় একই সঙ্গে অপ্রতিভ ও হতাশ হয়ে পড়ে সৌখী | এরপর মা তাকে হাত-মুখ ধুতে বললে সে জানায় যে সে খেয়ে এসেছে। মাকে সে রাতে রান্না করতেও সৌখী নিষেধ করে। মা তাকে ঘরেথাকা খই-মুড়ি খেয়ে নিতে বললে সে তা খায় |
তারপর মায়ের গায়ের পুরোনো কম্বলটা তাকে দিতে বলে সৌখী। যা অরাজি হলে তার আনা নতুন কম্বলটা যাকে দিয়ে, নিজে মায়ের কম্বলটা জড়িয়ে শুয়ে পড়ে সে।

প্রশ্নঃ “ঘুমের অসুবিধা হলেও,” —কার, কী কারণে ঘুমের অসুবিধা হত?

উত্তরঃ

প্রখ্যাত কথাসাহিত্যিক সতীনাথ ভাদুড়ীর ‘ডাকাতের মা’ ছোটোগে ডাকাতসর্দার সৌখীর মায়ের কথাই এখানে বলা হয়েছে। শীতকালে পর্যন্ত কম্বল দিয়ে মুড়ে না শুলে সৌখীর মায়ের ঘুমের অসুবিধা হত। কিন্তু বেশ কয়েকবছর আগে এই অভ্যাসটাই তাকে বিপদে ফেলেছিল।
কোনো এক শীতের রাতে সে যখন কম্বল মুড়ি দিয়ে ঘুমোচ্ছিল, তখন রাতদুপুরে সৌখী ফিরে এসে দরজায় নিয়মমতো সাংকেতিক টোকা দিলেও তার মায়ের কানে সে-শব্দ পৌঁছোয় না। প্রচণ্ড রেগে গিয়ে সৌখী তখন মাকে খুব মারধর করে সে এই বলে মাকে শাসানি দেয় যে, অমনভাবে নাকমুখ ঢেকে সে যদি আর কোনোদিন তাকে ঘুমোতে দেখে, তবে তাকে খুন করে ফেলবে।
ছেলের হাতে মার খেয়ে ও এই শাসানি শুনে সৌখীর মা কিন্তু মোটেও দুঃখিত ব অপমানিত বোধ করে না, বরং সে নিজের ভুল বুঝতে পারে। তাই, ‘ঘুমের অসুবিধা হলেও’, জেলে থাকা ছেলের নির্দেশমতো পাঁচ বছর ধরে একদিনের জন্যও সৌখীর মা শীতে নাকমুখ ঢেকে শোয়নি | অবশ্য তার গায়ের কম্বলটা পুরোনো হওয়ার জন্য এবং তার রক্তের জোর কমে যাওয়ার কারণেও ঠান্ডায় তার ঘুমের অসুবিধা হতে থাকে।

প্রশ্ন – “বুড়ি উঠে বসে!”—প্রসঙ্গ উল্লেখ করে বুড়ির উঠে বসার কারণ লেখো।

উত্তর

প্রখ্যাত কথাসাহিত্যিক সতীনাথ ভাদুড়ীর ‘ডাকাতের যা’ ছোটোগল্প থেকে গৃহীত উদ্ধৃত মন্তব্যটিতে ডাকাতসর্দার সৌখীর বিধবা মার কথা বলা হয়েছে| কোনো এক শীতের রাতে সৌখীর মা কম্বল মুড়ি দিয়ে শুয়েছিল | সেই সময় বাইরে নোনা-আতা গাছতলায় শুকনো পাতার একটা খড়খড় শব্দ শুনতে পায়।
সে প্রথমে তার মনে হয় যে, হয়তো বা এটা গন্ধগোকুলের বা শেয়ালের ঘুরে বেড়ানোর আওয়াজ। সৌখীর মা ভাবে, ওরা হয়তো কিছু খেতে এসেছে। সেসময় সৌখীর মার খুব শীত করতে লাগল | এ প্রসঙ্গেই তার গায়ে দেওয়া পুরোনো কম্বলটার বয়স যখন সে হিসাব করছিল, তখনই একটা টকটক শব্দ তার কানে আসে |
শব্দটিকে টিকটিকির ডাক মনে করে টিকটিকিটার প্রতি বিরক্তিও প্রকাশ করে সে। মনে মনে বলে, “হাতি পাঁকে পড়লে ব্যাঙেও লাথি মারে। টিকটিকিটা সুধু খুনসুড়ি আরম্ভ করেছে মজা দেখবার জন্য। করে নে।” এরপরই টিনের কপাটের ওপর টোকা মারলে যেরকম শব্দ হয়, দরজায় ঠিক সেইরকম দুটো টোকার শব্দ শুনতে পায় সৌখীর মা।
সেই খনখনে শব্দ শুনে সৌখীর মা এবার বুঝতে পারে যে, আগের শব্দটিও সেক্ষেত্রে টিকটিকির আওয়াজ ছিল না | ডাকাতের মা হিসেবে দরজায় টোকার শব্দ সম্পর্কে সে সর্বদাই অতিসচেতন | সুতরাং বহিরাগত কেউ দরজার বাইরে দাঁড়িয়ে আছে অনুমান করেই বুড়ি বিছানা ছেড়ে উঠে বসে।

প্রশ্ন- ‘হাতি পাঁকে পড়লে ব্যাঙেও লাথি মারে।” –বক্তার এ কথা বলার কারণ প্রসঙ্গ-সহ আলোচনা করো।

উত্তর

প্রখ্যাত কথাসাহিত্যিক সতীনাথ ভাদুড়ীর ‘ডাকাতের মা’ ছোটোগল্প থেকে

গৃহীত আলোচ্য স্বগতোক্তিটি ডাকাতসর্দার সৌখীর বিধবা মায়ের | এক শীতের রাতে সৌখীর মা যখন কম্বল মুড়ি দিয়ে একাকী শুয়েছিল, তখনই সে বাড়ির উঠোনে নোনা-আতা গাছতলায় শুকনো পাতার একটা খড়খড় শব্দ শুনতে পায় ।
প্রাথমিকভাবে সেটাকে গন্ধগোকুল বা শেয়ালের ঘুরে বেড়ানোর আওয়াজ বলে মনে করে সে। ভাবে যে, ওরা হয়তো কিছু খেতে এসেছে। সেসময় সৌখীর মার খুব শীত করতে লাগে | এ প্রসঙ্গেই তার গায়ের পুরোনো কম্বলটার বয়স যখন সে হিসাব করছিল, তখনই একটা টকটক শব্দ তার কানে আসে।এই শব্দটাকে টিকটিকির ডাক বলে মনে করে সৌখীর মা |
টিকটিকিটা তার ভাবনায় ব্যাঘাত ঘটাল বলে হতাশ সৌখীর মা ভাবে, টিকটিকিও যেন তার দুঃসময়ের সুযোগ নিয়ে তার সঙ্গে মশকরা করছে। সৌখীর মায়ের দুঃসময়ের কারণ মূলত দুটো | প্ৰথমত, ছেলে সৌখীর ডাকাতির দায়ে জেলে বন্দি থাকা, দ্বিতীয়ত, অভাবের তাড়নায় বাধ্য হয়ে নাতি ও বউমাকে বেয়াই বাড়িতে পাঠিয়ে দেওয়া। সৌখীর মা এই ভেবে হতাশ হয় যে, তার সঙ্গে টিকটিকিও মশকরা করছে |
এরই পরিপ্রেক্ষিতে তার খেদপূর্ণ স্বগতোক্তি, হাতি পাঁকে পড়লে ব্যাং পর্যন্ত তাকে লাথি মারে।

 

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *