অবান্তর ঘটনাকে কারণ বলে গ্রহণ করার দোষের দৃষ্টান্ত দাও Study Learn
অবান্তর ঘটনাকে কারণ বলে গ্রহণ করার দোষ
প্রশ্ন । অবান্তর ঘটনাকে কারণ বলে গ্রহণ করার দোষের দৃষ্টান্ত দাও।
● উত্তর :
অবান্তর ঘটনাকে কারণ: (১) দুর্ভিক্ষের কারণ হল দেবতার রোষ।
বিচার ঃ দুর্ভিক্ষের সঙ্গে দেবতার রোষের কোনো কার্য-কারণ সম্বন্ধ নেই। ‘দেবতার রোষ’ এই ক্ষেত্রে অবান্তর বিষয়। এই অনুমানের ভিত্তি হল কোনো বন্ধ ধারণা বা কুসংস্কার। প্রকৃত কারণ অনুসন্ধান না করে কুসংস্কারবশত একটি অবান্তর বিষয়কে কারণ বলা হয়েছে।
● অতিরিক্ত দৃষ্টান্ত :
(ক) মধু সেবন রোগ নিরাময়ের কারণ।
বিচার : মধু সহযোগে বিভিন্ন ওষুধ সেবন করে বিভিন্ন রোগ নিরাময় হয়। যুক্তিটিতে ‘অবান্তর ঘটনাকে কারণ বলে মনে করা’ নামক দোষ ঘটেছে। অন্বয়ী পদ্ধতির ভ্রান্ত প্রয়োগের ফলে এরূপ দোষ হয়েছে। এক্ষেত্রে রোগ নিরাময়ের ব্যাপারে মধু সেবন অবান্তর ঘটনা। মধু সেবনের সঙ্গে রোগ নিরাময়ের কোনো কার্যকারণ সম্বন্ধ থাকতে পারে না। যে-কোনো নিয়ত পূর্ববর্তী ঘটনাকে কারণ বলা যায় না। মধু সেবন রোগ নিরাময়ের নিয়ত পূর্ববর্তী ঘটনা হলেও কারণ নয়।
(খ) মোহনবাগান ক্লাবের সদস্য যতই বৃদ্ধি পাচ্ছে কলকাতার উত্তাপ ততই বৃদ্ধি পাচ্ছে। অতএব ওই ক্লাবের সদস্য বৃদ্ধি কলকাতার উত্তাপ বৃদ্ধির কারণ।
বিচার : এই ক্ষেত্রে দৃষ্টান্ত দুটির মধ্যে সমানুপাতিক পরিবর্তন লক্ষ করে, অর্থাৎ সহপরিবর্তন পদ্ধতিকে অপপ্রয়োগ করে, কার্য-কারণ সম্বন্ধ প্রতিষ্ঠা করা হয়েছে। কলকাতার তাপ বৃদ্ধির ক্ষেত্রে কোনো ক্লাবের সদস্য বৃদ্ধি অবান্তর ঘটনা। এই অবান্তর বিষয়কে কারণ বলায় যুক্তিটিতে ‘অবান্তর ঘটনাকে কারণ বলে গ্রহণ করা নামক দোষ’ ঘটেছে।
(গ) ভাগ্য খারাপের জন্য ছেলেটি এবার অকৃতকার্য হল।
বিচার : ‘ভাগ্য খারাপ’ একটি অবান্তর বিষয়। কার্য উৎপাদনে এর কোনো ভূমিকা থাকতে পারে না। এই অবান্তর বিষয়কে কারণ বলায় যুক্তিটিতে ‘অবান্তর বিষয়কে কারণ বলে গ্রহণ করার দোষ’ ঘটেছে।
(ঘ) কলকাতায় বাৎসরিক মৃত্যুর হার দিল্লি অপেক্ষা অধিক। সুতরাং, কলকাতা দিল্লি অপেক্ষা অধিক অস্বাস্থ্যকর স্থান।
বিচার : মৃত্যুহারের উপর ভিত্তি করে দুটি স্থানের জনস্বাস্থ্য সম্পর্কে সঠিক সিদ্ধান্ত করা যায় না। দিল্লি অপেক্ষা কলকাতায় মৃত্যু হার অধিক—এর একটি সম্ভাব্য
কারণ হল কলকাতায় জনসংখ্যার অনুপাত দিল্লি অপেক্ষা বেশি অথবা কলকাতা অপেক্ষা দিল্লিতে চিকিৎসা পদ্ধতি উন্নত ও চিকিৎসা গ্রহণ সহজসাধ্য। কলকাতায় মৃত্যুর হার বেশি, কারণ কলকাতা অধিক অস্বাস্থ্যকর একথা বললে প্রাসঙ্গিক বিষয়কে অবহেলা করে অবান্তর বিষয়কে কারণ বলা হবে। কাজেই যুক্তিটিতে ‘অবান্তর বিষয়কে কারণ বলার দোষ’ হয়েছে। –
(ঙ) যুক্তরাষ্ট্রের পারমাণবিক ক্ষেপণাস্ত্রের সংখ্যা যত বৃদ্ধি পাচ্ছে ভারতের জনসংখ্যা ততই বৃদ্ধি পাচ্ছে। সুতরাং, দুটির মধ্যে কার্যকারণ সম্বন্ধ আছে।
বিচার ঃ পর্যবেক্ষণের উপর ভিত্তি করে সহপরিবর্তন পদ্ধতি প্রয়োগ করা হয়েছে ও ঘটনা দুটির মধ্যে কার্যকারণ সম্বন্ধ অনুমান করা হয়েছে। যুক্তরাষ্ট্রের পারমাণবিক ক্ষেপণাস্ত্রের সংখ্যা বৃদ্ধি ও ভারতের জনসংখ্যা বৃদ্ধির মধ্যে সহগামীতার সম্বন্ধ থাকলেও কার্য-কারণ সম্বন্ধ নেই। ভারতের জনসংখ্যা বৃদ্ধির পক্ষে প্রথমটি একটি অবান্তর ঘটনা। কাজেই, যুক্তিটিতে অবান্তর ঘটনাকে কারণ বলে গ্রহণ করার দোষ ঘটেছে।
(চ) রাম যে পরীক্ষায় ফেল করবে তা বোঝাই গিয়েছিল। কারণ, পরীক্ষার হলে যাবার পথে তার সঙ্গে একটি অপয়া লোকের দেখা হয়েছিল।
বিচার ঃ রামের ফেল করার প্রকৃত কারণ অনুসন্ধান না করে আমরা একটি অপ্রাসঙ্গিক বা অবান্তর ঘটনাকে কারণ বলে চিহ্নিত করেছি। কুসংস্কারের বশবর্তী হয়ে কোনো লোককে পয়া বা অপয়া বলা হয়। কার্য উৎপাদনে তার কোনো ভূমিকা নেই। সুতরাং, যুক্তিটিতে ‘অবান্তর ঘটনাকে কারণ বলে গ্রহণ করার দোষ’ ঘটেছে।
প্রশ্ন । মন্দ উপমাযুক্তি কাকে বলে?
উত্তর : দুটি বস্তু বা ব্যক্তি বা ঘটনার মধ্যে কয়েকটি বিষয়ে সাদৃশ্য লক্ষ করে এদের মধ্যে কোনো একটিতে কোনো বিশেষ গুণ আছে দেখে যদি অনুমান করা হয় যে অপরটিতেও ওই বিশেষ গুণটি থাকবে তবে সেই যুক্তিকে উপমাযুক্তি বলা হয়। দুটি বস্তুর বা ঘটনার বা ব্যক্তির মধ্যে যদি সাদৃশ্য মৌলিক হয় তবে উপমাযুক্তি সাধু হয় । সাদৃশ্য মৌলিক না হলে বা সাদৃশ্যের গুরুত্ব তুচ্ছ হলে উপমাযুক্তি মন্দ হয়।
মন্দ উপমাযুক্তি এক প্রকার অনুমান সংক্রান্ত দোষ। উপমাযুক্তির অপপ্রয়োগের ফলে এই দোষের উদ্ভব হয়। উপমাযুক্তিতে এই দোষ হয়, অর্থাৎ উপমাযুক্তি মন্দ হয় যখন
(১) উপমিত বিষয়ের পক্ষে সাদৃশ্যগুলি প্রাসঙ্গিক না হয় এবং
(২) সাদৃশ্যমূলক ধর্মগুলি গুরুত্বপূর্ণ বা মৌলিক না হয় অর্থাৎ সাদৃশ্য যদি বাহ্য বা গৌণ হয়।
প্রশ্ন ২। অবৈধ সামান্যীকরণ কী ?
* উত্তর : এক জাতীয় কয়েকটি ব্যক্তি বা বস্তু বা ঘটনা পর্যবেক্ষণ করে সমজাতীয় সকল বস্তু বা ঘটনা বা ব্যক্তি সম্বন্ধে একটি সার্বিক সংশ্লেষক বচন প্রতিষ্ঠা করার প্রক্রিয়াকে সামান্যীকরণ (generalization) বলে। সংশ্লেষক বচনের বিধেয় পদ উদ্দেশ্য পদ সম্বন্ধে নতুন তথ্য দেয়। বিধেয় পদ উদ্দেশ্য পদে নিহিত থাকে না। কাজেই যে সার্বিক বচনের বিধেয় পদ উদ্দেশ্য পদ সম্বন্ধে কোনো নতুন জ্ঞান দান করে তাকে সার্বিক সংশ্লেষক বচন বলে। যেমন ‘সকল ছাত্র হয় সৎ’। কয়েকটি ছাত্রকে সৎ দেখে এই সার্বিক সংশ্লেষক বচনটি প্রতিষ্ঠা করা হয়েছে। আরোহ অনুমানে এই সামান্যীকরণ প্রক্রিয়া প্রয়োগ করে সার্বিক সংশ্লেষক বচন প্রতিষ্ঠা করা হয়।
সামান্যীকরণ বৈধ হতে পারে আবার অবৈধ হতে পারে। প্রকৃতির একরূপতা নীতি ও কার্যকারণ নিয়মের উপর ভিত্তি করে যখন সামান্যীকরণ করা হয় তখন সামান্যীকরণ বৈধ হয়। অপরদিকে যখন কতিপয় দৃষ্টান্ত দেখে, কার্য-কারণ সম্বন্ধের উপর ভিত্তি না করে, কেবল অবাধ অভিজ্ঞতার উপর ভিত্তি করে সার্বিক সংশ্লেষক বচন প্রতিষ্ঠা করা হয় তখন তাকে অবৈধ সামান্যীকরণ বলে। অবৈধ সামান্যীকরণ একপ্রকার অনুমান সংক্রান্ত দোষ।
অবান্তর ঘটনাকে কারণ বলে মনে করার দোষ কখন যুক্তিতে ঘটে?
উত্তর : কোনো ঘটনার সঙ্গে প্রাসঙ্গিক বা অপ্রাসঙ্গিক, বাস্তব বা অবাস্তব ঘটনা জড়িত থাকে। কার্য উৎপাদনের ব্যাপারে যেসবের কোনো ভূমিকা নেই এমন পূর্ববর্তী ঘটনাকে অপ্রাসঙ্গিক বা অবান্তর ঘটনা বলে। কারণ অনুসন্ধান করতে গেলে প্রাসঙ্গিক বা বাস্তব উপাদানগুলির দিকে দৃষ্টি দিতে হবে। যদি প্রাসঙ্গিক উপাদানকে অবহেলা করে কোনো অপ্রাসঙ্গিক বা অবান্তর ঘটনাকে কারণ বলে গ্রহণ করা হয়, তবে যুক্তি অবান্তর ঘটনাকে কারণ বলে গ্রহণ করার দোষে দুষ্ট হবে। অন্বয়ী পদ্ধতি ও সহপরিবর্তন পদ্ধতির অপপ্রয়োগের ফলে যুক্তিতে এই দোষের উদ্ভব হয়।