অপুর কল্পনা প্রশ্ন উত্তর বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায়
অপুর কল্পনা
বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায়
অপুর কল্পনা: কাহিনির সংক্ষিপ্তসার
অপুর কল্পনা→ অপুদের বাড়ি থেকে কিছুদূরে একটা বিরাট অশ্বত্থ গাছ দেখা যেত। সেই দিকে চেয়ে চেয়ে অজানা সব দেশের কথা শিশু অপুর মনে পড়ত; মা’র মুখে সে ওইসব দেশের রাজপুত্রদের গল্প শুনত।
অনেক দূরের দেশের কল্পনায় তার মন যখন একটা বিস্ময়-মাখানো আনন্দের মধ্যে হারিয়ে যেত, তখনই তার মায়ের জন্য মন কেমন করত। নীল আকাশের বুকে একটা চিল যখন উড়তে উড়তে তার দৃষ্টিপথের বাইরে চলে যেত, তখন সে হঠাৎ দৌড়ে রান্নাঘরে এসে মাকে জড়িয়ে ধরত। মা তাকে আদর করতেন।
→ দুপুরে খাওয়ার পর মা কাশীদাসি মহাভারত পড়তেন সুর করে। অপু শুনতে চাইত ঘুঁটেকুড়োনোর গল্প। মা বলতেন, সে তো হরিহোড়ের গল্প, সে গল্প মহাভারতে নেই, ভারতচন্দ্রের অন্নদামঙ্গল কাব্যে আছে। মায়ের মহাভারত পড়া শুনতে শুনতে সে মায়ের মুখের পান চেয়ে দেখত। রৌদ্রালোকিত বাঁশবন আর শেওড়া-ঘেঁটুবনের দিকে চেয়ে চেয়ে মহাভারতের ঘটনা তার মনে পড়ত; বেশি করে মনে পড়ত কুরুক্ষেত্র-যুদ্ধ এবং কর্ণের কথা।
কর্ণকেই সব চেয়ে ভালো লাগে অপুর, তার প্রতি মমতা হয়। কর্ণের রথচক্র পৃথিবী গ্রাস করেছে; নিরস্ত্র নিরুপায় কর্ণ প্রাণপণ চেষ্টায় দু’হাত দিয়ে সেই চাকা মাটি থেকে টেনে তোলবার চেষ্টা করছেন। অর্জুন তাঁর অনুরোধ উপেক্ষা করে অসহায় অবস্থায় তীর ছুঁড়ে তাঁকে বধ করলেন। এই ঘটনা মায়ের মুখে শুনতে শুনতে অপুর শিশু-হৃদয় বেদনায় ভরে যেত, দু’চোখ ছাপিয়ে উঠত অশ্রুতে। মানুষের দুঃখে কাঁদতে পারার মধ্যে যে আনন্দ আছে, তা অপু সেই প্রথম উপলব্ধি করল।
→ অপরাহ্ণ বেলায় মা গৃহকার্যে উঠে গেলে অপু আবার বাইরে এসে দূরের সেই অশ্বত্থ গাছটির দিকে চেয়ে থাকত। তার মনে হত, ওই গাছটার ওপারে আকাশের তলায় মহাবীর হতভাগ্য কর্ণ এখনও রথের চাকা টেনে তোলার কাজে ব্যস্ত আছেন। অপুর মতে যে-অর্জুন রাজ্য পেলেন, সম্মান পেলেন, শত্রু বিনাশ করলেন, প্রকৃত বিজয়ী কিন্তু তিনি নন; কর্ণই প্রকৃত বিজয়ী এবং বীর। কারণ মানুষের চোখের জলের মধ্যে দিয়ে চিরকাল তিনি বেঁচে আছেন। আজো আছেন।
→ মাঝে মাঝে অপুর মনে হত, মহাভারতে যুদ্ধটা বড় কম করে লেখা আছে। তাই সে ইচ্ছা মেটাবার জন্য বাখারি বা হালকা কোন গাছের ডালকে অস্ত্র ভেবে নিয়ে উঠোনে ঘুরে বেড়াত বা বাঁশবনের পথে বেরিয়ে পড়ত। মনে মনে কল্পনা করত, দ্রোণ যদি দশটা বাণ ছুঁড়লেন, তবে অর্জুন দু’শোটা বাণ ছুঁড়ে দিলেন। বাণে বাণে আকাশ অন্ধকার হয়ে গেল,—অর্জুন ঢাল-তরোয়াল নিয়ে রথ থেকে লাফিয়ে পড়লেন। দুর্যোধন এলেন, ভীম এলেন। সে কী যুদ্ধ! কী প্রবল যুদ্ধ !
→ অপুর মনে হত, মহাভারতের রথীরা মাত্র আঠার দিন যুদ্ধ করে যশস্বী হয়ে গেছেন, কিন্তু বর্তমানে যশোলাভের পথ ক্রমেই দুর্গম। তাঁরা জীবিত থাকলেও তার মত বালকের ইচ্ছাপূরণের জন্য মাসের পর মাস তাঁরা সমানভাবে যুদ্ধ করে যেতে পারতেন না।
♠ নামকরণ •
→ আমাদের পাঠ্য ‘অপুর কল্পনা’ রচনাংশের নাম মধ্যশিক্ষা পর্যদের দেওয়া। মূলগ্রন্থ ‘পথের পাঁচালীতে এটি নবম পরিচ্ছেদের প্রথমাংশ। সেখানে এই অংশের লেখকের দেওয়া কোন নাম নেই। তবে ‘পথের পাঁচালী’র যে দ্বিতীয় খণ্ড থেকে এটি গৃহীত হয়েছে, তার নাম, ‘আম-আঁটির ভেঁপু’।
→ এই রচনাংশের আদ্যন্ত জুড়ে আছে অপুর শিশুমনের গভীরে বিস্তৃত এক কল্পনা রাজ্য। এই কল্পনা-রাজ্যের সে একচ্ছত্র সম্রাট। সে তাদের বাড়ি থেকে দূরের অশ্বত্থ গাছটার দিকে চেয়ে থাকে কিংবা মায়ের কাছে বসে মহাভারত শোনে; তার দেহ বর্তমানের দৃশ্যমান জগতে থাকলেও, তার সুদূর পিয়াসী মন দূর বনরেখার ওপারে নীল আকাশের সীমা ছাড়িয়ে কোন্ দূর অতীতের কল্পলোকে পাড়ি জমায়,—সে দেশ কখনো রূপকথার, কখনো বা রামায়ণ-মহাভারতের দেশ।
বুদ্ধিমান প্রবীণ মন যেখানে প্রবেশ করতে দ্বিধাবোধ করে, অপুর শিশুমন সেখানে সমস্ত সম্ভবঅসম্ভবের সীমা অনায়াসে অতিক্রম করে ভেতরে ঢুকে যায়। তাই তেপান্তরের পথ-হারানো মাঠে হয়তো সে কখনো রাজপুত্রদের সঙ্গী হয়, কখনো হয়তো ‘সোনার কাঠি’র স্পর্শে সদ্য-জাগা ঘুম চোখে ঘুমপরীদের সাতমহলার সৌন্দর্য অবাক হয়ে দেখে, আবার কখনো-বা মহাভারতের বিরাট যুদ্ধক্ষেত্র তার প্রত্যক্ষগোচর হয়ে ওঠে।
রথী-মহারথীরা তাঁদের মৃত্যুর ওপারের অন্ধকার যবনিকা ছিন্ন করে বালকের দৃষ্টিতে বাস্তব ও জীবন্ত হয়ে এসে হাজির হল। ভাগ্যহত মহাবীর অসহায় কর্ণ চোখের জলের অধিকার নিয়ে হয়ে ওঠেন অপুর আত্মার আত্মীয়।
→ কিন্তু এই দেখা তো সকলের পক্ষে সম্ভব নয়; এ দেখা বাস্তব দেখাও নয়। সব কিছুকে নতুন করে দেখার এই অসাধারণ কবিদৃষ্টি ও কল্পনাদৃষ্টি অপুর ছিল। তাই সে এসব দেখে। এ রচনায় যা দেখানো হয়েছে, বিভূতিভূষণ তা অপুর কল্পনার মাধ্যমেই আমাদের দেখিয়েছেন এবং দেখার
সঙ্গে অনুভব করিয়েছেন। তাই এই রচনাংশের নাম ‘অপুর কল্পনা’ রাখা আদৌ অসঙ্গত হয়নি। —এ নামকরণ সার্থক ও যথার্থ।
অপুর কল্পনা: প্রশ্ন উত্তর
প্রশ্ন:। মহাভারতের কথা অপুকে কীভাবে অনুপ্রাণিত করত, তা বর্ণনা কর।
বা, ‘অপুর কল্পনা’য় মহাভারতের দৃশ্যপট কীভাবে ফুটে উঠেছে আলোচনা কর।
উত্তর : গল্প শোনা শিশুমনের একটি মানসিক বৈশিষ্ট্য। অপুর শিশুমন তার ব্যতিক্রম নয়। গ্রীষ্মকালীন নিস্তব্ধ মধ্যাহ্নে মায়ের শ্রুতিমধুর কণ্ঠে কাশীদাসি মহাভারত-পাঠ অপুর কল্পনাবিলাসী মনকে গভীরভাবে আকৃষ্ট করত এবং জাগিয়েও তুলত। অপু জানলার বাইরে বাঁশবন ও দুপুরের রৌদ্র-মাখানো শেওড়া-ঘেঁটু বনের দিকে তাকিয়ে তন্ময় হয়ে মহাভারতের, বিশেষত কুরুক্ষেত্র যুদ্ধের কাহিনি শুনত।
মহাভারতের ভাগ্যহত কর্ণের বিষাদ-ক্লিষ্ট জীবন ও মর্মান্তিক পরিণতি তার মনকে গভীর দুঃখ ও বেদনায় ভারি করে তুলত। জয়ের মুহূর্তে কর্ণের রথের চাকা মাটিতে পুঁতে যাওয়া এবং ওই চাকা তুলতে না দিয়ে সম্পূর্ণ অস্ত্রহীন অবস্থায় অর্জুন তাকে হত্যা করে। অর্জুনের এই অমানবিক আচরণ ও পৌরুষহীন যুদ্ধ-জয়ের গৌরবকে অপুর শিশুমন কিছুতেই মেনে নিতে পারেনা। কর্ণের জীবনের এই মর্মান্তিক কাহিনি অপুর শিশুহৃদয়কে বেদনায় আপ্লুত করে। সমবেদনায় তার দু’চোখ বেয়ে নেমে আসত জল। তার হৃদয়ে অনির্বচনীয় এক অনুভূতি জেগে উঠত।
সে এইভাবে জীবনপথের এক বিশেষ পথের সন্ধান পেত, —মানুষের চোখের জলে, দীনতায়, মৃত্যুতে, আশাহত ব্যর্থতায়, বেদনায় ভরে যেত অপুর মন। গভীর ব্যথায় বিকেলের রৌদ্র-মাখানো অশ্বত্থ গাছটার মাথার দিকে তাকিয়ে অপুর মনে হত ভাগ্যহত কৰ্ণ যেন আকাশের নিচে অনেক দূরে কোথাও যেন এখনও মাটি থেকে তার রথের চাকা প্রাণপণে টেনে তোলবার ব্যর্থ চেষ্টা করে চলেছে। তাই ভাগ্যহত পরাজিত, নিহত কর্ণই অপুর প্রিয় চরিত্র, অর্জুন নয়। অর্জুনকে সে বিজয়ী বলে স্বীকার করতে কুণ্ঠিত।
→ অপুর শিশুহৃদয়ে কর্ণের কাহিনি যেমন বেদনাময় অনুভূতি জাগিয়ে তুলতো, তেমনি কুরুক্ষেত্র যুদ্ধের অপূর্ণতা সম্পর্কেও তার অভিযোগ ছিল। তার কল্পনা-বিলাসী মন সেই অপূর্ণতাকে পূর্ণতাদানের জন্য একটা বাখারি কিংবা হালকা কোনো গাছের ডালকে অস্ত্ররূপে হাতে নিয়ে বাড়ির পেছনে বাঁশবাগানের পথে বা বাইরের উঠোনে ঘুরে বেড়াত এবং নিজের মনে মহাভারতের যুদ্ধকে ইচ্ছামতো অতিরঞ্জিত করে তুলতো।
সেখানে কোনো বীরেরই বাণ ফুরোয় না, বাণে বাণে আকাশ অন্ধকার হয়। এমনকী মহাভারতের আঠারো দিনের যুদ্ধ দীর্ঘ থেকে দীর্ঘতর হয়ে যায়। এইভাবে মহাভারতের কাহিনি অপুর শিশুমনের বিচিত্র কল্পনায় নানারসে পল্লবিত হয়ে উঠত।
প্রশ্ন: । “কৰ্ণ যেন ঐ অশ্বত্থ গাছটার ওপারে আকাশের তলে, অনেক দূরে কোথাও এখনও মাটি হইতে রথের চাকা দুই হাতে প্রাণপণে টানিয়া তুলিতেছে।…রোজই তোলে–রোজই তোলে—”উদ্ধৃত অংশটি কোন লেখকের কোন্ রচনার অন্তর্গত? মূল গ্রন্থের নাম কী? কর্ণ কে? কার কী জাতীয় মনোভাব এই বর্ণনার মধ্য দিয়ে প্রকাশ পেয়েছে? এই প্রসঙ্গে তার চরিত্রের কী পরিচয় পাওয়া যায়?
• উত্তর : উদ্ধৃত অংশটি বিখ্যাত কথাশিল্পী বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায়ের ‘অপুর কল্পনা’ শীর্ষক রচনার অন্তর্গত। মূল গ্রন্থটি হল বাংলা সাহিত্যের বিখ্যাত উপন্যাস, ‘পথের পাঁচালী’।
→ কর্ণ হলেন পাণ্ডবজননী কুন্তীর কানীন পুত্র। জন্মসূত্রে কর্ণ মাতা কর্তৃক পরিত্যক্ত হয়ে অধিরথ নামে সারথি ও তাঁর স্ত্রী রাধার পুত্ররূপে লালিতপালিত হন। বয়ঃপ্রাপ্ত হয়ে তিনি অস্ত্রশস্ত্রে কৃতবিদ্য হন, কৌরবদের মিত্রতা লাভ করেন এবং কুরুক্ষেত্রের যুদ্ধে কৌরবপক্ষে যোগদান করেন। যুদ্ধারম্ভের আগে মাতা কুন্তীর মুখে নিজের জন্মপরিচয় জানতে পেরেও, পাণ্ডবপক্ষে কর্ণ যোগ দেননি। অর্জুনের হাতে তাঁর শেষ পর্যন্ত মৃত্যু হয়। মহাভারতে কর্ণ শুধু অন্যতম শ্রেষ্ঠ বীরই নন, দাতা হিসেবেও বিখ্যাত।
→ অপু অত্যন্ত কল্পনাপ্রবণ বালক। দুপুর বেলা খাওয়ার পরে মায়ের মুখে মহাভারত পাঠ শুনতে শুনতে অপুর মন চলে যায় রোদে-ঝলমল শেওড়া-ঘেঁটুবনের ওপারে মহাভারতের দেশে। মহাভারতের বীর যোদ্ধা এবং তাঁদের যুদ্ধ-কাহিনি অপুর মুখস্থ। সব চরিত্রের মধ্যে সবচেয়ে বেশি ভাল লাগে তার কর্ণকে। জন্মের মুহূর্তেই মাতৃস্নেহ থেকে কর্ণ হলেন বঞ্চিত; তারপর পরের গৃহে হলেন পরান্নে প্রতিপালিত। এরপর কুরুক্ষেত্রের যুদ্ধে অর্জুনের হাতে নিহত হলেন তিনি।
– তাঁর রথের চাকা যুদ্ধকালে মেদিনী গ্রাস করল; কী প্রাণপণ চেষ্টায় বারবার সেই চাকা মাটি থেকে টেনে তোলবার চেষ্টা করলেন তিনি; অর্জুনকে তিনি অনুরোধ জানালেন কিছুক্ষণ অপেক্ষা করবার জন্য। কিন্তু অর্জুন তাঁর সব অনুরোধ উপেক্ষা করে তাঁকে তীরে তীরে বিদ্ধ করলেন অসহায়ভাবে মৃত্যু হল মহাবীর কর্ণের। কর্ণের জীবনের ব্যর্থতা এবং অসহায় ভাবটা বালক অপুর সহজ সরল কচি মনকে বেদনায় আপ্লুত করে।
কর্ণ বীর, মহাবীর, কিন্তু ভাগ্যের হাতে কী অসহায় তিনি! ভাগ্যবিড়ম্বিত কর্ণের কথা ভাবতে ভাবতে অপু চোখের জলের বেগ দমন করতে পারে না; দু’চোখ তার ঝাপসা হয়ে যায়। মহাবীর কর্ণের প্রাণপণ শক্তিতে রথচক্র আকর্ষণের ছবিটি অপুর শিশুমনকে তাই যেন গ্রাস করে নিয়েছে; কর্ণের ওই অসহায় মৃত্যু তার কাছে যেমন মর্মন্তুদ তেমনি বাস্তব।
তাই দুপুরবেলা মায়ের মুখে মহাভারত শুনতে শুনতে দূরের ঐ অশ্বত্থ গাছটার দিকে দৃষ্টিপাত মাত্রই অপুর মনে হয় কর্ণ আজও রথের চাকা টেনে তুলছেন; তিনি রোজই তোলেন— এ কাজে তাঁর বিরাম নেই, বিশ্রাম নেই। তিনি চিরন্তন।
→ অপুর এই চিন্তার মধ্য দিয়ে তার কল্পনাপ্রবণ শিশুমনের যে সহৃদয়তার ছবি বিভূতিভূষণ অতি সুন্দর ও মনোজ্ঞ করে এঁকেছেন, তার তুলনা হয় না। তার সহজ সরল মনে সুদূর মহাভারতের যুগ এবং বর্তমানের রূঢ় বাস্তব একাকার হয়ে যায়। ইতিহাস ও ভূগোলের কোন কালগত ও দূরগত ব্যবধান থাকে না।
সম্ভব-অসম্ভবের সীমারেখাটা অবলীলায় বিলুপ্ত হয়। তাই ভীষ্ম, দ্রোণ, দুর্যোধন, ভীম, অর্জুনকে মনে হয় তার কাছের প্রতিবেশী এবং তার অন্তরের অন্তঃস্থলে প্রিয়তম বীরের শ্রদ্ধা ও আতিথ্য পেয়ে যান ভাগ্যবিড়ম্বিত মহাবীর কর্ণ।
প্রশ্ন: । “—বিজয়ী বীর অর্জুন নহে,—যে রাজ্য পাইল, মান পাইল, রথের উপর হইতে বাণ ছুঁড়িয়া বিপন্ন শত্রুকে নাশ করিল;”—কার লেখা, কোন্ রচনাংশ থেকে এই অংশটি নেওয়া হয়েছে? মূল গ্রন্থের নাম কি? উদ্ধৃত কথা কার মনে হয়েছে? তার কাছে আসল বিজয়ী কে? এই বিজয়ীকে তার ভালো লাগার কারণ বিস্তারিত করে লেখো।
• উত্তর : প্রকৃতিপ্রেমিক কথাশিল্পী বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায়ের ‘অপুর কল্পনা’ শীর্ষক পাঠ্যাংশ থেকে নেওয়া হয়েছে।
→ মূল গ্রন্থের নাম হল, ‘পথের পাঁচালী’।
→ উদ্ধৃত কথাগুলি ‘পথের পাঁচালী’ উপন্যাসের শিশুনায়ক অপুর মনে হয়েছে।
→ তার কাছে আসল বিজয়ী হল, নিরস্ত্র, অসহায়, বিপন্ন মহাবীর কর্ণ।
→ মায়ের মুখে মহাভারত পাঠ শুনে শুনে মহাভারতের বীর যোদ্ধাদের জীবনকথা ও তাঁদের যুদ্ধ-কাহিনি বালক অপুর মুখস্থ হয়ে গিয়েছিল। ভাগ্যবিড়ম্বিত নিয়তি-লাঞ্ছিত মহাবীর কর্ণের জীবনের আদি-অন্ত সমস্ত ঘটনাই তার চোখের সামনে ভাসছে। কর্ণ মহাবীর, মহাযোদ্ধা। কিন্তু, জন্মমুহূর্তেই মাতৃ-পরিত্যক্ত; অস্ত্রশিক্ষায় তার নানা রকমের বাধা; অস্ত্র-পরীক্ষার অংশগ্রহণে সে অযোগ্য; সূতপুত্ররূপে সে প্রতিপালিত, সুতরাং অভিজাত মহলে সে অবহেলিত, অবজ্ঞাত।
অভিশপ্ত কর্ণের রথের চাকা মেদিনী গ্রাস করেছে, ‘দুই হাতে প্রাণপণে সেই চাকা’ মাটি থেকে সে টেনে তুলতে চেষ্টা করে, —কিন্তু অর্জুন ‘সেই নিরস্ত্র অসহায়, বিপন্ন কর্ণের অনুরোধ মিনতি উপেক্ষা’ করে তীর ছুঁড়ে তাকে মেরে ফেললেন। মহাভারতের এই হৃদয়বিদারক করুণ ঘটনার দুঃখ অপুর শিশুহৃদয় আকুল করে তুলত। ‘চোখের জল বাগ’ মানতো না। তাই যুদ্ধে কর্ণের মৃত্যু হলেও, তিনি সকলের সহানুভূতি আকর্ষণ করে, সহানুভূতির পাত্র হয়ে ‘চোখের জলে মানুষের মনে বেঁচে রইলেন চিরকালের জন্য।
→ অপরাহ্ণের ‘রাঙা-রোদ-মাখানো গাছটার দিকে’ তাকিয়ে অপুর মন কেমন যেন উদাস হয়ে যেত। তার কল্পনা ও অনুভূতি দিয়ে সে দেখতে পেত ‘কর্ণ যেন ওই অশ্বত্থ গাছটার ওপারে আকাশের তলে, অনেক দূরে কোথাও এখনও মাটি’ থেকে রথের চাকা দুই হাতে প্রাণপণে টেনে তুলবার চেষ্টা করছে। মহাবীর হয়েও কর্ণ চিরকাল ছিলেন কৃপার পাত্র। অপুর হৃদয়ানুভূতিতে ‘বিজয়ী বীর অর্জুন নহে’—বিজয়ী বীর হলেন, কর্ণ।
কারণ, অর্জুন রাজ্য পেয়েছেন, মান পেয়েছেন, রথের ওপর থেকে বাণ ছুঁড়ে বিপন্ন শত্রুকে নাশ করেছেন,—শেষে যুদ্ধে অর্জুন জয়লাভ করেছেন; কিন্তু, কর্ণ মানুষের সহানুভূতি পেয়েছেন, শ্রদ্ধা পেয়েছেন, চিরকালের জন্য সকল মানুষের হৃদয় জয় করে চোখের জলে জেগে রয়েছেন,—তিনিই তো অপুর শিশু হৃদয়ে চিরবিজয়ী। তাই, ‘মহাভারতের সমস্ত চরিত্রের মধ্যে কর্ণের চরিত্র বড় ভাল লাগে’ অপুর কাছে।
প্রশ্ন: । “ইহার অভাব পূর্ণ করিবার জন্য এবং আশা মিটাইয়া যুদ্ধ জিনিসটা উপভোগ করিবার জন্য সে এক উপায় বাহির করিয়াছে।”—অংশটি কোন্ রচনা থেকে গৃহীত? এখানে কিসের অভাবের কথা বলা হয়েছে? ‘সে’ কে? সে কী উপায় বের করেছে তা বর্ণনা কর। এর থেকে তার চরিত্রের কী পরিচয় পাওয়া যায় লেখ।
• উত্তর : আলোচ্য অংশটি বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায়ের ‘পথের পাঁচালী’ উপন্যাসের ‘অপুর কল্পনা’ শীর্ষক রচনা থেকে গৃহীত।
→ অপু তার মায়ের মুখে মহাভারত পাঠ শুনতো। তার মনে হত মহাভারতে যুদ্ধের ব্যাপারটা খুব কম করে বর্ণিত হয়েছে। এখানে সেই যুদ্ধ বর্ণনার অপ্রতুলতার প্রতি ইঙ্গিত করা হয়েছে।
এখানে ‘সে’ বলতে অপুকেই বোঝানো হয়েছে।
→ কল্পনাচারী অপু মায়ের মুখ থেকে মহাভারতের যুদ্ধের যে বর্ণনা শুনেছে, তাতে তার হৃদয় ভরেনি, মনের খিদে মেটেনি। তার মনে হয়েছে মহাভারতে যুদ্ধের কথা খুব কম করে লেখা আছে। অপুর শিশুমন যুদ্ধ খুব ভালোবাসে। তাই আশ মিটিয়ে যুদ্ধের আনন্দ উপভোগ করবার জন্য অপু যে-উপায় উদ্ভাবন করেছে, তা অতি বিচিত্র।
সে একটা বাঁশের বাখারি কিংবা হালকা কোন গাছের ডালকে অস্ত্রস্বরূপ হাতে নিয়ে বাইরের উঠানে একজন যোদ্ধার মত ঘুরে বেড়ায়; কখনো-বা আম-বন বাঁশ-বনের পথে পথে যুযুধান বীরের মত বেরিয়ে পড়ে। মনে মনে কল্পনা করে দ্রোণ ও অর্জুনের যুদ্ধ। তা দুজনের যুদ্ধ সে একাই করে।
দ্রোণ যদি দশ বাণ নিক্ষেপ করেন তো অৰ্জুন দু’শোটা বাণ ছুঁড়ে দেন। কল্পনার বাণে বাণে কল্পনার আকাশ অন্ধকার হয়ে যায়। অর্জুন লাফ দিয়ে রথ থেকে নেমে আসেন, তারপর আসেন দুর্যোধন ও ভীম। ওঃ! সে কী ভয়ানক যুদ্ধ ! দারুণ যুদ্ধ ! মহাভারতের বীরেরা মাত্র আঠারো দিন যুদ্ধ করেছিলেন, কিন্তু অপুর যুদ্ধ চলতে থাকে মাসের পর মাস ধরে…যত ইচ্ছা তত যুদ্ধ…। এইভাবে শিশু অপু দিনের পর দিন কাল্পনিক যুদ্ধ চালিয়ে যেত এবং আশ মিটিয়ে যুদ্ধ উপভোগ করত।
। কল্পনাপ্রবণ অপু চরিত্রের এ এক বিচিত্র ও সুন্দর পরিচয়। তার কল্পনা সুদূরপ্রসারী এবং অতীত বিহারী। শিশুমন যুদ্ধের মত একটি রোমাঞ্চকর বিষয়ের প্রতি চিরকালই কৌতূহলী হয়ে থাকে। অপুর মধ্যে এর চরম প্রকাশ লক্ষ করা যায়। তাছাড়া শিশুর সহজ সরল বিশ্বাসের রাজ্যে বাস্তব অবাস্তব, অতীত বর্তমান বলে কিছু নেই।
সে সবকিছুকেই সহজে বিশ্বাস করে নিতে পারে। তাই মহাভারতের যুগ তার কাছে পরিদৃশ্যমান বাস্তব, মহাভারতের বীর যোদ্ধারা হয়ে ওঠেন তার নিকটতম প্রতিবেশী। এই ধরনের কল্পনায়, কৌতূহলে, বিশ্বাসে তাপু বাংলা সাহিত্যে সৃষ্ট এক অপূর্ব শিশুচরিত্র।
প্রশ্ন: । “মহাভারতের রথীগণ মাত্র অষ্টাদশ দিবস যুদ্ধ করিয়া নাম কিনিয়া গিয়াছেন, কিন্তু রক্তমাংসের দেহে জীবন্ত থাকিলে তাঁহারা বুঝিতে পারিতেন, যশোলাভের পথ ক্রমশই কীরূপ দুর্গম হইয়া পড়িতেছে।”—কোন্ রচনা থেকে উদ্ধৃত হয়েছে? মহাভারতের রথীগণ বলতে কাদের বোঝায়? কোন্ প্রসঙ্গে কে এই বর্ণনা দিয়েছেন? উদ্ধৃত অংশের মূল বক্তব্য বুঝিয়ে লেখ।
• উত্তর : আলোচ্য অংশটি প্রকৃতিপ্রেমিক কথাশিল্পী বিভূতিভূষণের ‘অপুর কল্পনা’ শীর্ষক রচনার একটি উজ্জ্বল উদ্ধার।
মহাভারতের রথী বলতে পাণ্ডব ও কৌরবপক্ষীয় যে সমস্ত বীর রথী কুরুক্ষেত্রের যুদ্ধে অংশগ্রহণ করেছিলেন, তাঁদের বোঝানো হয়েছে। সংখ্যায় তারা প্রচুর। এঁদের ভেতর কয়েকজন উল্লেখযোগ্য হলেন, কৌরবপক্ষের ভীষ্ম, দ্রোণ, কৃপ, কর্ণ, অশ্বত্থামা, দুর্যোধন প্রমুখ এবং পাণ্ডবপক্ষের যুধিষ্ঠির, ভীম, অর্জুন, অভিমন্যু, দ্রুপদ, সাত্যকি প্রমুখ বীরবৃন্দ।
→ ‘পথের পাঁচালী’ উপন্যাসের নায়ক হল অপু। সমস্ত উপন্যাসটি অপুর কল্পনার রঙে রঞ্জিত।
সেই কল্পনার রাজ্যে মহাভারতের একটি বিশিষ্ট স্থান আছে। খাওয়া-দাওয়ার পর দুপুরবেলায় মায়ের মুখে কাশীদাসি মহাভারত-পাঠ শুনতে শুনতে অপুর কল্পনাপ্রবণ মন মহাভারতের দেশে পাড়ি জমাত। তার মনে হত, বাড়ির পাশে রৌদ্রালোকিত বাঁশবাগান-ঘেঁটুবনের ওধারে কিংবা ওই বিরাট অশ্বত্থ গাছটার পরপারে আছে মহাভারতের সেই বিচিত্র দেশ।
সেখানকার বীর রথীমহারথীরা যেন তার অতি পরিচিত প্রতিবেশী ও আত্মীয়। ওদের ভেতর সকলের থেকে হতভাগ্য হল কর্ণ। ওই কর্ণ অপুর অত্যন্ত প্রিয়। অর্জুনের হাতে তার নিরস্ত্র অসহায় মৃত্যু অপুর চোখে জল এনে দেয়। মাটিতে পুঁতে যাওয়া রথের চাকা টেনে তোলার প্রাণপণ চেষ্টায় ব্যর্থ কর্ণের ছবিটি সে কিছুতেই ভুলতে পারে না।
→ আলোচ্য অংশে মহাভারতের যুদ্ধ সম্পর্কে তার একটি বিশেষ ধারণা প্রকাশ পেয়েছে। মাঝে মাঝে অপুর মনে হয় মহাভারতে যুদ্ধটা বড়ো কম করে লেখা হয়েছে। যুদ্ধের সাধ যেন তার মিটতে চায় না। তাই নিজে তার অভাব মেটাবার জন্য একটা বাখারি কিংবা একটা গাছের হালকা ডালকে অস্ত্র ভেবে নিয়ে বাইরের উঠোনে ঘুরে বেড়ায়; কখনো-বা বাঁশবনের পথে বিজয়ী বীরের মত বেরিয়ে পড়ে। সে কল্পনা করে দ্রোণ-অর্জুনের যুদ্ধ।
তা দু’জনের যুদ্ধ সে একাই করে। দ্রোণ যদি দশ বাণ নিক্ষেপ করেন, তো অর্জুন দু’শোটা বাণ ছুঁড়ে দেন। বাণে বাণে আকাশ অন্ধকার হয়ে আসে। অর্জুন লাফ দিয়ে রথ থেকে নেমে পড়েন, তারপর আসেন দুর্যোধন, ভীম। বেধে যায় আবার তুমুল যুদ্ধ। সে যুদ্ধ দারুণ! ভীষণ! এই যুদ্ধ কল্পনায় অপু যেন দ্বিতীয় কাশীরাম দাস হয়ে ওঠেন, তার গৃহের আঙিনায় রচিত হয় নতুন কুরুক্ষেত্র। মাত্র আঠারো দিনের যুদ্ধে তার মন ভরে না।
অপুর মনে হয় ভীষ্ম, দ্রোণ, কর্ণ, অর্জুন প্রমুখ রথীরা যুদ্ধের জন্য যে ভূয়সী প্রশংসা পেয়েছেন, তার জন্য ঐ আঠারো দিনের যুদ্ধ যথেষ্ট নয়। সে-যুগের মানুষ যেন অতি অল্পেই সন্তুষ্ট হয়ে ওই সব বীরদের প্রশংসাপত্র দিয়েছিলেন, কবির কাব্যে তারই স্বীকৃতি রয়েছে। কিন্তু সেই বীরেরা যদি এ-যুগে জীবিত থাকতেন, তাহলে বুঝতেন যশোলাভ ইদানীং অত সহজ নয় বহু আয়াসসাধ্য হয়ে উঠেছে।
এ-যুগের বুদ্ধিমান বিচারক অত সহজে এবং ওইটুকু যুদ্ধে তাঁদের অতখানি সম্মান ও স্বীকৃতি দিতেন না বলেই অপুর বিশ্বাস। অন্তত অপু নিজে সহজে তাঁদের অতখানি স্বীকৃতি দিত না। কারণ তার তীব্র যুদ্ধ-সাধ মেটাবার জন্য দরকার দীর্ঘস্থায়ী যুদ্ধ। তা মাসের পর মাস ধরে তাঁরা নিশ্চয়ই যুদ্ধ করতে রাজি হতেন না। বালকের ইচ্ছার কাছে মহাভারতের দুর্ধর্ষ রথীদেরও নিশ্চিত তখন হার স্বীকার করতে হত।
প্রশ্ন। “অনেক দূরের কথায় অপুর শিশুমনে যে ভাব সৃষ্টি করত তার দুটো দিক ছিল— বিস্ময় মিশ্রিত আনন্দ ও মায়ের জন্য ব্যাকুলতা।”—এদুটি ভাবকে কিভাবে লেখক বর্ণনা করেছেন তা লেখ।
• উত্তর : বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায় তাঁর ‘পথের পাঁচালী’ উপন্যাসের ‘অপুর কল্পনা’ পাঠ্যাংশে অপুর শিশুমনের আবেগময় বিস্ময়-মাখানো আনন্দের অব্যক্ত অনুভূতি অতি সুন্দর ও সুচারু ভাবে ব্যক্ত করেছেন। অনভিজ্ঞ শিশু অপু সুযোগ পায় না বাড়ির বাইরে যাওয়ার। সংকীর্ণ গণ্ডির মধ্যে তার চলাফেরা; তাই তার বাস্তব অভিজ্ঞতা খুবই সীমিত।
কিন্তু কল্পনার জগৎ তার কাছে অবাধ এবং সুদূর বিস্তৃত। মায়ের মুখ থেকে বিভিন্ন দেশের রাজপুত্তুরদের কথা সে শোনে; রামায়ণ, মহাভারত, অন্নদামঙ্গল প্রভৃতির কাহিনিও সে মনোযোগ দিয়ে শোনে; ওইসব কল্প লোকের দেশ সম্পর্কে সে শুধুই কল্পনা করতে পারে, ধারণা করতে পারে না। তাই ‘দালানের জানালা কী রোয়াক’ থেকে দূরের অশ্বত্থ গাছটার দিকে তাকিয়ে দূরের কত অজানা দেশের কথা সে তন্ময় হয়ে ভাবে।
দিগন্তবিস্তৃত অসীম নীলাকাশটা অনেক দূর, কিন্তু কতদূর সে-সম্পর্কে তার বোধ স্পষ্ট নয়। কুঠির মাঠটাও অনেক দূর, কিন্তু কতদূর তা সে আন্দাজ করতে পারে না। সে কল্পনা করতে পারে, উপলব্ধি করতে পারে, কিন্তু ভাষায় ব্যক্ত করে বুঝিয়ে বলতে জানে না। তার এই আত্মলীন ভাবতন্ময়তা মূহূর্তের মধ্যে নিয়ে যায় তাকে সেই সব অজানা-অচেনা দূরের দেশে, যেখানে তার মা নেই; সে সম্পূর্ণ নিঃসঙ্গ, একাকী।
।তখনই সে একাকিত্ব এড়াতে ‘বিস্ময়-মাখানো আনন্দের ভাব থেকে বাস্তব জগতে ফিরে আসে। নীলুদের তালগাছটার উঁচু মাথাটা পিছনে ফেলে উড়ন্ত চিলটা দৃষ্টির বাইরে চলে গেলে, সে একদৌড়ে রান্নাঘরের দাওয়ায় মায়ের আঁচলে আশ্রয় নেয়। সুনিপুণ শিল্পী বিভূতিভূষণ একদিকে যেমন অপুর শিশুমনের কল্পজগতের বিস্ময়-মাখানো আনন্দের ভাব ও রোমাঞ্চকর অনুভূতি প্রকাশ করেছেন, তেমনি অন্যদিকে মায়ের জন্য তার ব্যাকুলতাও পরিস্ফুট করেছেন।