নুন কবিতার প্রশ্ন ও উত্তর Study Learn
নুন
–জয় গােস্বামী (১৯৫৪)
নুন কবিতার বিষয়বস্তু:
‘নুন’ কবিতাটি এক নিম্নবিত্ত পরিবারের দিনযাপনের কাহিনি। সাধারণ ভাতকাপড়ের চিন্তায় আর অসুখবিসুখ ও ধারদেনাতেই নিম্নবিত্ত মানুষের জীবন কেটে যায়।তবু তার মধ্যেই তারা আনন্দ খুঁজে নেবার ব্যর্থ চেষ্টা করে। তারা জানে, দুঃখ করে কোনো লাভ নেই।তাই কঠোর বাস্তবকে ভুলে থাকতে রাত হলে তারা নেশার আশ্রয় নেয়| সামাজিক সম্পর্কের ধারণাকে পালটে দিয়ে বাবা-ছেলে দুই ভাইয়ের মতাে একই সঙ্গে গাঁজা সেবন করে।
কষ্টের এই জীবনে তাদের পক্ষে রােজ বাজার করা সম্ভব হয় না। আবার তাদের এই অভাবের জীবনেই বাসা বাঁধে বেহিসেব আর অবিবেচনা| তাই হাতে দুটো পয়সা এলে খরচ হয়ে ওঠে মাত্রাছাড়া | নিম্নবিত্ত এই মানুষদেরও মনের মধ্যে থাকে গােপন স্বপ্নবিলাস এবং সৌন্দর্যপ্রিয়তা।
বাড়িতে ফেরার সময় তাহ গােলাপচারাও কিনে আনা হয় কখনাে-সখনাে| যদিও স্থানাভাবের সংসারে সে গােলাপচারা কোথায় পোঁতা হবে বা তাতে আদৌ ফুল হবে কি না এসব তারা ভেবে দেখে না। বরং আবার নেশায় ডুবে যাওয়াটাই অনেক কাঙ্ক্ষিত মনে হয় তাদের। এভাবেই অল্পে খুশি থেকে দুঃখকষ্টের দিনযাপনের মধ্যেই বেঁচে থাকার সার্থকতা খুঁজে চলে তারা।
কিন্তু কখনাে কখনাে এভাবেও দিন চলা অসম্ভব হয়ে ওঠে। মাঝে মাঝে গভীর রাতে বাড়ি ফিরে যখন ঠান্ডা ভাতে নুনটুকুও জোটে না, তখনই কথকের মাথায় রাগ চড়ে যায় আর সেই রাগের অংশীদার হয় বাবা, ছেলে দুজনেই। আর সেই সময়েই সব দুঃখকষ্টের সঙ্গে মানিয়ে নেওয়া জীবনের বৃত্ত ভেঙে শােনা যায় সােচ্চার দাবি| সামান্য লােকের সেই দাবিতে থাকে শুকনাে ভাতের সঙ্গে শুধু সামান্য লবণের প্রত্যাশা।
নুন কবিতার বড় প্রশ্ন উত্তর:
সামগ্রিক বিষয়ভিত্তিক প্রশ্নোত্তর
● নুন’ কবিতায় কবির যে জীবনবােধের প্রকাশ ঘটেছে। উদ্ধৃতিযােগে আলােচনা করাে।
উত্তরঃ
“আমরা তাে অল্পে খুশি; কী হবে দুঃখ করে?—নুন’ কবিতায় গােস্বামীর ব্যবহৃত এই প্রথম বাক্যটিতে দুঃখ করে কোনাে লাভ নেই বু নিম্নবিত্ত মানুষেরা অল্পে সন্তুষ্ট হওয়ার উপায় খুঁজে নেয়। চলে যায় শব্দবন্ধ বুঝিয়ে দেয় খুশি এখানে অনায়াস নয়। “রাত্তিরে দু-ভাই মিলে দিই গঞ্জিকাতে।”—অর্থাৎ বাস্তবজগৎকে ভুলে গিয়ে নেশার যে বাপব্যাটা দুই বন্ধুর মতাে সেই খুশিরই সন্ধান করে। “সব দিন হয় না বা হলে, হয় মাত্রাছাড়া”বাক্যটিতে প্রকাশিত হয় নিম্নবিত্তের অস জীবনধারা।
আর তাকেই কবি সম্পূর্ণ করেন এইভাবে—“বাড়িতে কে পথে কিনে আনি গােলাপচারা” | স্থানাভাবের বাসস্থানে কোথায় পেঁাতা সেই গােলাপচারা কিংবা কবে তাতে ফুল ফুটবে—সেসব প্রশ্নের উত্তর : এইসব গরিব মানুষের কাছে একেবারেই অর্থহীন। তবুও এই অর্থাত মাঝেও শুধুমাত্র নিজের সৌন্দর্যবিলাসিতার শখ মেটাতে হঠাৎই গােল চারা কিনে আনে।
দুপুররাতে বাড়ি ফিরে ঠান্ডা ভাতে নুনটুকুও অনেক সময় পায় না জীবন তখন আর এতেই খুশি’ বলতে পারে না। তাই তখন—“রাণ মাথায় আমার, আমি তার মাথায় চড়ি/বাপব্যাটা দু-ভাই মিলে সারা মাথায় করি এবং তার সঙ্গে থাকে গরিব মানুষের বেপরােয়া মন
ঘােষণা করে—“করি তাে কার তাতে কী?” কুদ্ধ মানসিক অবস্থা থেকেই খন দাবি ওঠে, “আমরা তাে সামান্য লােক/আমাদের শুকনাে ভাতে লবণের ব্যবস্থা হােক।” এই কবিতায় সাধারণ মানুষের বেঁচে থাকার ন্যূনতম দাবিকে জোরালাে সমর্থন জানানাের মাধ্যমে কবি জয় গােস্বামীর জীবনবােধ পাঠকের কাছে স্পষ্ট হয়ে ওঠে।
● ‘নুন’ কবিতার শিল্পসার্থকতা আলােচনা করাে।
উত্তর
জয় গােস্বামী ‘নুন’ কবিতাটিতে একটি নিম্নবিত্ত পরিবারের প্রতিদিনের বেঁচে থাকার লড়াই, বেহিসেবি স্বপ্ন দেখা আর আশা-আকাঙ্ক্ষার আখ্যানকে রুপ দিতে গিয়ে যে শিল্প-আঙ্গিকের ব্যবহার করেছেন, তা অনবদ্য।
প্রথমেই লক্ষণীয় কবিতার সামগ্রিক ভাষা ব্যবহার। নিম্নবিত্ত মানুষদের জীবনে থাকে দুঃখের অগাধ বিস্তার, কিন্তু তারই মধ্যে ‘খুশি’ খুঁজে বেঁচে থাকার চেষ্টা করে তারা। এই তাৎপর্যকে স্পষ্ট করতেই কবি সম্ভবত ব্যবহার করেছেন অন্ত্যমিলযুক্ত স্পষ্ট অথচ অনুচ্চকণ্ঠ, ছন্দোময় এক ভাষাশৈলী “আমরা তাে অল্পে খুশি; কী হবে দুঃখ করে?/আমাদের দিন চলে যায়। সাধারণ ভাতকাপড়ে।’
নিম্নবিত্ত মানুষদের জীবনে দুঃখ, যন্ত্রণা বা অপ্রাপ্তির দীর্ঘ তালিকা বােঝানাের জন্য কবি এই কবিতায় পূর্ণতির ব্যবহার অনেক কম করেছেন। ষােলাে লাইনের এই কবিতাটিতে পূর্ণতির সংখ্যা মাত্র চার।
প্রায়শই পঙক্তি শেষের শব্দকে পরের পঙক্তির শুরুতে ব্যবহার করেছেন। আর এ সবই করেছেন কবিতাকে গতিশীল এবং বক্তব্যকে তীক্ষ করে তােলার প্রয়ােজনে।
কবিতাটির একেবারে শেষ পঙক্তিতে-কবি ‘নুন’ শব্দের বদলে ব্যবহার করেছেন ‘লবণ’ শব্দটিকে| নিম্নবিত্ত সমাজ যেহেতু তাদের ন্যূনতম দাবিটুকু ভদ্র, শিক্ষিত ও শাসক শ্রেণির কাছে পৌঁছে দিতে চাইছে, তাই দাবিপত্রের
লেখ্য পােশাকি ভাষার প্রয়ােজনেই কবি এখানে ‘নুন’ শব্দের বদলে ব্যবহার করেছেন ‘লবণ’ শব্দটি বিষয়ের সঙ্গে এভাবেই জয় গােস্বামী তাঁর কবিতায় শিল্প-আঙ্গিককেও মানানসই করে তুলেছেন।
●“নিম্নবিত্তের নােনা চোখের জলের দিনলিপি নয়, জয় গােস্বামীর ‘নুন’ কবিতাটি শেষপর্যন্ত হয়ে উঠেছে লবণাক্ত সমুদ্রের । গর্জন।”ব্যাখ্যা করাে।
উত্তর
নুন’ কবিতায় কবি জয় গােস্বামী অত্যন্ত বিশ্বাসযােগ্যতার সঙ্গে তুলে ধরেছেন এক নিম্নবিত্ত পরিবারের রূঢ় বাস্তব দিনলিপি| অভাব আর অসুখে কোনােরকমে দিন কাটিয়ে দেওয়ার মধ্যেই এই নিম্নবিত্ত পরিবারের লােকজন সন্তুষ্টি খুঁজে নেওয়ার চেষ্টা করে। যদিও এই কঠোর বাস্তব থেকে মুক্তির জন্য বা দুঃখকে সাময়িকভাবে ভুলে থাকার জন্য রাত্তিরে দুই ভাইয়ের মতাে বাবা-ছেলের গাঁজায় টান দেওয়া চলে। নিম্নবিত্তের স্বভাবধর্ম মেনেই কখনাে কখনাে বাড়িতে ফেরার পথে গােলাপচারাও কিনে আনা হয়।
কিন্তু কোথায় পোঁতা হবে সেই গােলাপচারা কিংবা কবে ফুটবে তাতে ফুল?—এসব প্রশ্নের উত্তর তাদের কাছে নেই। তাদের কাছে সত্য শুধু মুহূর্তের ইচ্ছেপূরণ। মাঝে মাঝে গভীর রাতে বাড়ি ফিরে দেখা যায়, ঠান্ডা হয়ে যাওয়া ভাতে খাওয়ার মতাে প্রয়ােজনীয় নুনটুকুও নেই। রাগ তখন মাথায় চড়ে যায়। বাপব্যাটা দুজন মিলে এরপর সমস্ত পাড়া মাথায় করে। সেই মুহূর্তে তারা ভুলে যায় সামাজিক শিষ্টাচার। এক ধরনের বেপরােয়া মানসিকতায় তারা ঘােষণা করে— “করি তাে কার তাতে কী?” চোখের জল তখন যেন লবণাক্ত সমুদ্রের গর্জনে বদলে যায়।
আর কবিতার একেবারে শেষ পঙক্তিতে এইসব নিম্নবিত্ত মানুষের বেঁচে থাকার আর্তি হিসেবে এই লবণের জন্য জোরালাে দাবি গর্জে উঠতে দেখা যায়।
●“আমাদের শুকনাে ভাতে লবণের ব্যবস্থা হােক”—কে, কাদের কাছে এই দাবি করেছে? এই দাবি কতটা যুক্তিসংগত?
নুন কবিতার বড়ো প্রশ্ন ও উত্তর:
অথবা, “আমাদের শুকনাে ভাতে লবণের ব্যবস্থা হােক” কে বলেছে ? এ দাবি কার কাছে? কেন?
অথবা, “আমাদের শুকনাে ভাতে লবণের ব্যবস্থা হােক”নুন কবিতা অবলম্বনে এই দাবির যৌক্তিকতা বিচার করাে।
উত্তর
গরিব, নিম্নবিত্ত শ্রেণির মুখপাত্র হিসেবে কবি জয় গােস্বামী তার রচিত ‘নুন’ কবিতায় শাসকশ্রেণি তথা সমগ্র সমাজের কাছে এই দাবি জানিয়েছেন।
কবি জয় গােস্বামী জানিয়েছেন দুঃখ করে লাভ নেই বলে গরিব মানুয়ে অল্পেতেই খুশি থাকার মন্ত্র শিখে নেয়। সাধারণ ভাতকাপড়েই কোনাে তাদের দিন কেটে যায়।কঠোর খাটুনি খেটে তারা দু-বেলা অবস্ত্রের প্রয়ােজন মেটায়। এদের কোনাে সঞ্চয় নেই, নেই কোনাে শখ মেটানাের ক্ষমতা দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনা অসুখ হলে রােজগার বন্ধ থাকেবলে মহাজনের কাল থেকে ধার করে কোনােক্রমে তারা সংসার চালায়।
স্বল্প পরিসরে এর নিজেদের প্রয়ােজন মেটায় এবং অতিকষ্টে দিন চালায়। কিন্তু প্রতিদিনে জীবনে এই সামান্য আয়ােজনটুকুও যখন তাদের জোটে না, তখনই তাদে মাথার ঠিক থাকে না বাড়িতে অশান্তি করে, সারা পাড়ায় পৌঁছে দেয় তাদে ক্ষোভের আওয়াজ। এই চরম অভাব আর অসহায়তাই একসময় তাদেরকে উচ্চকণ্ঠ করে তােলে নিজেদের অধিকারের দাবির ঘােষণায়
—“আমরা তে সামান্য লােক/আমাদের শুকনাে ভাতে লবণের ব্যবস্থা হােক।” শাসক শ্রো তথাসমগ্র সমাজের কাছে তাই গরিব-দুঃখী মানুষের প্রতিনিধি কথকের একাত আবেদন, এই গরিব নিম্নবিত্ত মানুষদের প্রতিদিনের শুকনাে ভাতে অন্তত বেঁ থাকার জন্য ন্যূনতম প্রয়ােজনীয় লবণের ব্যবস্থাটুকু যেন করা হয়।
নুন কবিতার বড় প্রশ্ন ও উত্তর:
বিশ্লেষণধর্মী উত্তর ভিত্তিক প্রশ্নাবলী
●“আমি তার মাথায় চড়ি”-কে, কার মাথায় চড়ে ? পঙক্তিটির তাৎপর্য ব্যাখ্যা করাে।
উত্তর
জয় গােস্বামীর ‘নুন’ কবিতায় কবি রাগের মাথায় চড়ার কথা বলেছেন। | ‘নুন’ কবিতায় কবি শ্রমজীবী মানুষের জীবনধারার বর্ণনা দিয়েছেন। সাধারণ ভাতকাপড়ে অতিবাহিত এই জীবনে অসুখ এবং ধারদেনার নিত্য সহাবস্থান। বাস্তব জগতের নিষ্ঠুরতাকে ভুলতে তাই মাঝে মাঝে চলে নেশার ঘােরে ডুবে যাওয়া। কখনাে কখনাে মনের মধ্যে সুখবিলাস উঁকি দিলেও বাস্তবের আঘাতে তা পূর্ণতা পায় না। এভাবেই ‘হেসে খেলে, কষ্ট করে’ নিম্নবিত্তের দিন চলে যায়।
কিন্তু এই মেনে নেওয়া ও বয়ে যাওয়ার জীবনে তীব্র বাধা তৈরি হয় যখন বাড়ি ফিরে ঠান্ডা ভাতে খাওয়ার প্রয়ােজনীয় নুনটুকুও পাওয়া যায় না। তখন দিন যেন চলেও না। বেঁচে থাকার ন্যূনতম আয়ােজনটুকুও না থাকায় রাগ তখন সহ্যের সমস্ত সীমা ছাড়িয়ে যায়। অনিয়ন্ত্রিত ক্ষোভের প্রকাশে সংযমের বাঁধ ভেঙে যায়। অল্পে খুশি থাকার যে প্রাত্যহিকতা তাতেও বিঘ্ন উপস্থিত হয়|আয়াসসাধ্যভাবে জীবনযাপনের সেই বিষয়টিই কবি উল্লেখ করেছেন “রাগ চড়ে মাথায় আমার, আমি তারমাথায় চড়ি” পঙক্তিটির দ্বারা।
● আমরা তাে অল্পে খুশি;”—কোন্ প্রসঙ্গে বক্তা এ কথা বলেছেন? এই ‘অল্পে খুশি হওয়ার তাৎপর্য কী?
অথবা, “আমরা তাে অল্পে খুশি;”বক্তার জীবনচরিত্রের কীরূপ পরিচয় কবিতায় ফুটে উঠেছে?
অথবা, ‘‘আমরা তাে অল্পে খুশি;”—“অল্পেতে খুশি মানুষদের জীবনযন্ত্রণার যে ছবি ‘নুন’ কবিতায় ফুটে উঠেছে তার পরিচয় দাও।
উত্তর
জয় গােস্বামীর ‘নুন’ কবিতায় সাধারণ ভাতকাপড়ে কায়ক্লেশে কাটানাে নিম্নবিত্ত জীবনের যে চিত্র পাই তার সঙ্গে জুড়ে থাকে অসুখ এবং ধারদেনা। অভাব আর অসুখে ভরা জীবনে তার রােজের খাবারটুকুও জোটে না। এর মধ্যেই ‘হেসে খেলে, কষ্ট করে দিন কাটে নিম্নবিত্ত মানুষের; বলা ভালাে, তারা এভাবেই দিন কাটাতে বাধ্য হয়। এই অল্পে সন্তুষ্ট জীবন কাটানাে প্রসঙ্গেই মন্তব্যটি করা হয়েছে।
» সমাজের নিম্নবিত্ত মানুষদের জীবনে প্রতি পদক্ষেপে যেখানে অনিশ্চয়তা, অভাব আর অসুখ নিত্যসঙ্গী, ‘অল্পে খুশি হওয়াটা সেখানে যেন একটা বাধ্যবাধকতা। “আমরা তাে অল্পে খুশি/কী হবে দুঃখ করে?”—তাদের সামনে দুঃখ থেকে মুক্তির যেহেতু কোনাে পথ নেই, তাই বাধ্য হয়ে নিজেদের ভাগ্যকে মেনে নেয় এই অভাবী মানুষরা| ফলে, ‘চলে যাওয়া’ দিনের এই ‘অল্পে খুণি’ হওয়াই তাদের জীবনের অনিবার্য সত্য এবং ভবিতব্য।
যদিও এরই সঙ্গে চলতে থাকে সাময়িকভাবে যন্ত্রণাকে ভুলে থাকার চেষ্টাও। তাই রাত্তিরে দু-ভাই মিলে টান দেয় গাজাতে। অর্থাৎ এই ‘খুশি’ যে স্বতঃস্ফূর্ত এবং স্বাভাবিক নয়, তা বােঝা যায় তাদের নেশার ঘােরে ডুবে থাকার মধ্যেই। এই ভাবে নিম্নবিত্ত মানুষের জীবনকে আবরণহীনভাবে তুলে ধরেছেন কবি। ‘অল্পে খুশি, তাই সেখানে আনন্দের প্রকৃত প্রকাশ না, আসলে তা হয়ে ওঠে বাস্তবকে মেনে নেওয়া ও তার সঙ্গে নিজেকে মানিয়ে নেওয়ার এক হৃদয়বিদারক ইতিহাস |
● সব দিন হয় না বাজার”—কোন্ কবিতার অংশ? এই কবিতায় শ্রমজীবী মানুষদের জীবনচিত্রের যে পরিচয় আছে তা লেখাে।
উত্তর
জয় গােস্বামীর ‘নুন’ কবিতাটি থেকে প্রশ্নোধৃত অংশটি নেওয়া হয়েছে।
কবি জয় গােস্বামী তার নুন’ কবিতায় সমাজের বঞ্চিত শ্রমজীবী মানুষের জীবনযন্ত্রণা প্রকাশ করেছেন| অল্পেতেই খুশি হতে হবে জেনে এরা কঠোর পরিশ্রম করে সমাজের ভার বহন করে চলে। সাধারণ ভাতকাপড়েই এদের দিন চলে যায়। কোনাে শখ বা স্বপ্নবিলাসের স্থান নেই তাদের জীবনে।
মাঝে মাঝে দুঃখকষ্ট বা অভাব সহ্য করতে না পেরে সামাজিক সম্পর্কের বিন্যাস বদলে বাপব্যাটা দুভাই মিলে গাজায় টান দেয় কিছুক্ষণের জন্য সব কিছু ভুলে থাকতে| আবার যেদিন একটু বেশি আয় হয়, সেদিন সে মাত্রাছাড়া বাজার করে ফেরে, সঙ্গে একটু শখপূরণের জন্য কিনে আনে একটা গােলাপচারাও | কিন্তু স্থানাভাবের সংসারে সেটাকে কোথায় পোঁতা সম্ভব বা তাতে আদৌ ফুল হবে কি না, তা নিয়েও রয়ে যায় ঘাের অনিশ্চয়তা।
আসলে গরিবের সমস্ত জীবনটাই দাঁড়িয়ে থাকে অনিশ্চয়তার ওপর। কিন্তু মাঝে মাঝে যখন সারাদিন কঠোর পরিশ্রমের পর বাড়ি ফিরে ঠান্ডা ভাতে, সামান্য নুনের জোগানটুকু পায় না তারা, তখন রাগের মাথায় বাপব্যাটা মিলে চিৎকারচঁচামেচিতে সারা পাড়া মাথায় করে। আর তখনই দুঃখকষ্টের সঙ্গে মানিয়ে নেওয়া জীবনের বৃত্ত ভেঙে শােনা যায় সােচ্চার দাবি—শুকনাে
ভাতের সঙ্গে কেবল লবণের প্রত্যাশা। এটুকু হলেই খেয়েপরে হেসেখেলে তাদের দিন চলে যাবে।
নুন কবিতার ছোট প্রশ্নাবলি:
নুন কবিতার ছোট প্রশ্ন উত্তর:
১, “মাঝে মাঝে চলেও না দিন”– এই উক্তির মধ্য দিয়ে কবি কী বােঝাতে চেয়েছেন?
উত্তর: এই উক্তির মধ্য দিয়ে কবি নিম্নবিত্ত হতদরিদ্র মানুষের অর্থনৈতিক অনিশ্চয়তার কথা বােঝাতে চেয়েছেন।
২. কথকের দুপুররাতে বাড়ি ফেরা কী প্রমাণ করে?
উত্তর: কথকের দুপুররাতে বাড়ি ফেরা প্রমাণ করে, কথককে জীবনধারণের জন্য উদয়াস্ত কঠোর পরিশ্রম করতে হয়।
৩. কথক কখন বাড়ি ফিরতেন?
উত্তর: রাতে, কখনাে কখনাে দুপুররাতে কবি বাড়ি ফিরতেন।
৪, খেতে বসে কথকের রাগের কারণ কী ছিল?
উত্তর: খেতে বসে ঠান্ডা ভাতে নুনটুকুও না জুটলে কথকের মাথায় রাগ চড়ে যেত।
৫. ঠান্ডা ভাতে নুন না থাকাকে কীসের প্রকাশ বলে মনে করা যায়?
উত্তর: ঠান্ডা ভাতে নুন না থাকাকে দারিদ্রের প্রকাশ বলে মনে করা যায়।
৬. “নুন নেই ঠান্ডা ভাতে”—উদ্ধৃতাংশটি জীবনের কোন্ সত্যকে স্পষ্ট করে?
উত্তর: আলােচ্য উদ্ধৃতাংশটির দ্বারা নিম্নবিত্ত মানুষদের জীবনের দারিদ্র্য আর অসহায়তার কথা বলা হয়েছে।
৭. “খেতে বসে রাগ চড়ে যায়”-রাগ চড়ে যাওয়ার কারণ কী?
উত্তর: জয় গােস্বামীর ‘নুন’ কবিতায় দেখা যায়, যখন রাতদুপুরে বাড়ি ফিরে ঠান্ডা ভাতে একটু নুন পায় না নিম্নবিত্ত হতদরিদ্র মানুষেরা, তখন তাদের রাগ চড়ে যায়।
৮. “আমি তার মাথায় চড়ি”- কবি কার মাথায় চড়েন এবং কেন?
উত্তর: কবি রাগের মাথায় চড়েন কারণ রাতে বাড়ি ফিরে ঠান্ডা ভাতে নটুক না পেয়ে কবি সংযম হারান।
৯, “বাপব্যাটা দু-ভাই মিলে সারাপাড়া মাথায় করি”– কেন তাদের এমন ব্যবহার?
১০. মাথায় রাগ চড়লে বাপব্যাটা কী করে?
উত্তর: জয় গােস্বামীর নুন’ কবিতায় দেখা যায়, মাথায় রাগ চড়লে বাবা মিলে চেঁচিয়ে অশান্তি করে সারা পাড়া মাথায় করে।
১১, “করি তাে কার তাতে কী?’—এ কথা বলার
উত্তর: গরিব মানুষের অনিয়মিত অশান্তিময় অভাবী জীবন থেকে নেওয়া অসংযম এবং অশালীন ঔদ্ধত্য প্রকাশ পেয়েছে আলােচ্য উদ্ধৃতিটি।
১২. “আমরা তাে সামান্য লােক”–“সামান্য’ শব্দটি এখানে কীসের প্রতীক
উত্তর: ‘নুন’ কবিতায় সামান্য’ শব্দটি নিম্নবিত্ত হতদরিদ্র মানুষের সামান অধিকার রক্ষিত না হওয়ার ক্ৰোধ ও অভিমানের প্রতীক।
১৩. ‘নুন’ কবিতার শেষে কবি কী বাসনা জানিয়েছিলেন?
উত্তর: ‘নুন’ কবিতার শেষে একজন ‘সামান্য লােক’ হিসেবে কবি তাঁদের শুকনাে ভাতে যাতে একটু লবণের ব্যবস্থা হয় সেই বাসনা জানিয়েছিলেন।
১৪. এখানে শুকনাে ভাতের কথা বলা হয়েছে কেন?
উত্তর: জয় গােস্বামীর ‘নুন’ কবিতায় শুকনাে ভাতের কথা বলা হয়েঙ্গে কারণ পঞ্চব্যঞ্জনে সজ্জিত অন্ন গরিবের কাছে স্বপ্নের অতীত।
১৫. ‘নুন’ কবিতার শেষে কবি কীসের ব্যবস্থা করার দাবি জানিয়েছেন?
উত্তৱঃ নুন’ কবিতার শেষে কবি তার মতাে সাধারণ মানুষের জন্য অন্ততপক্ষে শুকনাে ভাতে একটু লবণের ব্যবস্থা করার দাবি জানিয়েছেন।
১৬. নুন’ কবিতায় কবি গরিব মানুষের কেবল নুনের চাহিদাকেই তুলে ধরেছেন কেন?
উত্তর: জয় গােস্বামী তার ‘নুন’ কবিতায় গরিব মানুষের কেবল নুনের চাহিদাকেই তুলে ধরেছেন, কারণ ভাতের সঙ্গে শুধু নুনের সংস্থান হলেই গরিবের সুখে দিন চলে যায়।
১৭. ‘নুন’ কবিতায় কবি কাদের কথা তুলে ধরেছেন?
উত্তর: জয় গােস্বামী তার ‘নুন’ কবিতায় দীনদরিদ্র শ্রমজীবী মানুষের কথা তুলে ধরেছেন।
১৮.নুন’ কবিতায় আমরা কারা?
উত্তর: জয় গােস্বামীর ‘নুন’ কবিতায় ‘আমরা’ বলতে সমাজের দীনদরিদ্র গরিব-দুঃখী মানুষ, যারা অল্পেই খুশি তাদের কথা বলা হয়েছে।
১৯, “রাগ চড়ে মাথায় আমার, আমি তার মাথায় চড়ি।”—এ কথার অর্থ কী?
অথবা, “রাগ চড়ে মাথায় আমার, আমি তার মাথায় চড়ি।”—মাথায় রাণ চড়লে কী ঘটনা ঘটে?
উত্তৰ: এ কথার দ্বারা গরিব-দুঃখী মানুষের অনিয়ন্ত্রিত রাগে বহিঃপ্রকাশকে বােঝানাে হয়েছে।
নুন কবিতার ছোট প্রশ্ন উত্তর:
অতিসংক্ষিপ্ত উত্তরভিত্তিক প্রশ্নাবলি
১. ‘নুন’ কবিতাটি কোন্ কাব্যগ্রন্থ থেকে নেওয়া হয়েছে?
উত্তৱা নুন’ কবিতাটি জয় গােস্বামীর ভুতুমভগবান কাব্যগ্রন্থ থেকে নেওয়া হয়েছে।
২ “আমরা তাে অল্পে খুশি; কী হবে দুঃখ করে?”- দুঃখ করে কিছু হবে না বলে কবি কেন মনে করেছেন?
জীবনে নেই। উত্তরঃ কবি জয় গােস্বামী তার নুন’ কবিতায় দুঃখ করে কিছু হবে না বলে মনে করেছেন, কারণ বেশি সুখের কোনাে সম্ভাবনাই দরিদ্র নিম্নবিত্ত মানুষের জীবনে নেই।
৩, “আমরা তাে অল্পে খুশি;”—অল্পে খুশি হওয়ার কারণ কী?
উত্তরঃ মুন’ কবিতায় কবির অল্পে খুশি হওয়ার কারণ দুঃখ করে কোনাে লাভ নেই।
৪, “আমাদের দিন চলে যায় সাধারণ ভাতকাপড়ে এর মধ্য দিয়ে কী প্রকাশিত হয়?
উত্তর। বক্তব্যটির মধ্য দিয়ে প্রকাশিত হয় হতদরিদ্র নিম্নবিত্ত মানুষের প্রতিনিধি কথকের কোনােরকমে দিনযাপনের কথা।
৫, “চলে যায় দিন আমাদের দিন কীভাবে চলে যায়?
উঃ বস্তার দিন চলে যায় অসুখে এবং ধারদেনাতে, আর রাত্তিরে দুই ভাই মিলে গাঞ্জা সেবনের মধ্য দিয়ে।
৬. কবির কথায় তাদের মতাে মানুষের দিন কীভাবে চলে যায়?
উঃ কবির কথায় তাদের মতাে মানুষের সাধারণ ভাতকাপড়ে, অসুখে। সুধারদেনাতে অর্থাৎ কষ্টেসৃষ্টে দিন চলে যায়।
৭.“বাত্তিরে দু-ভাই মিলে টান দিই গঞ্জিকাতে”এই গঞ্জিকাতে টান “নার তাৎপর্য কী?
উঃপঞ্জিকাতে টান দেওয়ার তাৎপর্য হল গাজার নেশায় জীবনের যন্ত্রণাকে,কঠোর বাস্তবকে ভুলে থাকার ব্যর্থ চেষ্টা।
৮.সবদিন বাজার হয় না কেন তাদের?
সবদিন বাজার হয় না কারণ সব দিন ঠিকমতাে কাজ করে উপযুক্ত।
জয় গােস্বামীর নন’ কবিতায় দেখা যায়, নিম্নবিত্ত হতদরিদ্র মানুষদের সবদিন বাজার হয় না কারণ সব দিন ঠিকমতাে কাজ করে উপযুক্ত পারিশ্রমিক মেলে না।
৯.সবদিন হয় না বাজার; হলে, হয় মাত্রাছাড়া’—এই ‘মাত্রাছাড়া মাধ্যমে কবি কী বোঝাতে চেয়েছেন?
উঃ জয় গোস্বামী তার নুন কবিতায় এই মাত্রাছাড়া কথাটির মাধ্যমে গরিব মানুষের বেহিসেবি এবং অসংযমী জীবন উচ্ছ্বাসকে বোঝাতে চেয়েছেন
নুন কবিতার প্রশ্ন mcq:
১০. বাড়িতে ফেরার পথে কিনে আনি গোলাপ চারা– বক্তা কেন গোলাপ চারা কিনে আনেন?
উত্তর: নিম্নবিত্ত মানুষরা অনেক অভাবের মধ্যেও তাদের শখপূরণের জন্য গােলাপচারা কিনে আনে।
১১, গােলাপচারা কিনে আনার অর্থ কী?
উত্তর: গােলাপচারা কিনে আনার অর্থ হল দীনদরিদ্র গরিব মানুষেরও সৌন্দর্যবােধ ও বিলাসিতার শখ আছে, যা তারা সুযােগ পেলেই পূরণ করার চেষ্টা করে।
১২. ‘নুন’ কবিতায় কিনে আনা গােলাপচারাটি কীসের প্রতীক?
উত্তর: জয় গােস্বামীর নুন’ কবিতায় কিনে আনা গােলাপচারাটি নিম্নমধ্যবিত্তের গােপনে লালিত সৌন্দর্যবিলাসের প্রতীক।
১৩, নুন’ কবিতায় বক্তা গােলাপচারা কিনে এনে কী ভাবেন?
উত্তর: ‘নুন’ কবিতায় বক্তা গােলাপচারা কিনে এনে ভাবেন যে, সেটি কোথায় তবেন বা তাতে আদৌ ফুল হবে কি না।
১৪, “কিন্তু পুঁতব কোথায়?”—গােলপচারা সম্পর্কে কথকের এই মন্তব্য স্পষ্ট করাে।
: উত্তর: গােলাপচারা সম্পর্কে এই মন্তব্যের দ্বারা স্পষ্ট হয় যে দরিদ্র কথকের কোনােভাবে শুধু মাথাগোঁজার থানটুকুই আছে।
১৫. “ফুল কি হবেই তাতে?”—বক্তার এই সংশয়ের কারণ কী?
উত্তর: বক্তার এই সংশয়ের কারণ তাদের অসহায় দরিদ্র জীবনে সঠিকভাবে গােলাপচারাকে পরিচর্যা করার সুযােগ বা সময় নেই।
১৬. গােলাপচারা নিয়ে শেষে কী সমস্যার উদ্ভব হয়?
উত্তর: জয় গােস্বামীর ‘নুন’ কবিতায় দেখা যায়, গরিব মানুষের বসবাসের সামান্য সংস্থানে গােলাপচারা পোঁতবার জন্য উপযুক্ত স্থানটুকুও পাওয়া যায় না।
১৭, গােলাপচারায় ফুল ফুটবে কি না তা নিয়ে সংশয়ের কারণ কী?
উত্তর: গােলাপচারায় ফুল ফুটবে কি না তা নিয়ে সংশয়ের কারণ উপযুক্ত পরিচর্যা করে গােলাপচারা থেকে ফুল ফোটানাের জন্য প্রচুর অবসর সময় চাই, যা গরিব মানুষের নেই।
১৮. সে অনেক পরের কথা”—পরের কথাটি কী?
উত্তর: আলােচ্য অংশে ‘অনেক পরের কথা বলতে গােলাপচারায় ফুল ফোটবার কথা বলা হয়েছে।
১৯. গােলাপচারায় ফুল হওয়াকে কবি ‘সে অনেক পরের কথা বলেছেন কেন?
উত্তর: কবি গােলাপচারায় ফুল হওয়াকে ‘সে অনেক পরের কথা বলেছেন, কারণ কথক তথা নিম্নবিত্ত হতদরিদ্র মানুষদের তখন সেই ভবিষ্যৎ সুখের বিষয়ে ভাবার ধৈর্য ছিল না |
২০. কবি বেশি কিছু না চাওয়ার কথা বলেছেন কেন?
উত্তর: হেসেখেলে কষ্ট করে অল্পতে খুশি থাকার জন্যই কবি বেশি কিছু না চাওয়ার কথা বলেছেন।
২১. অসুখ করলে তারা কীভাবে দিন কাটায়?
উঃ: জয় গোস্বামীর ‘ন’ কবিতায় দেখা যায়, অসুখ করলে সমাজের নিয়ৰিও ‘রিদ মানুষেরা ধারদেনা করে দিন কাটায়।
নুন কবিতার নামকরণ:
নুন কবিতার নামকরণের সার্থকতা:
‘নুন’ কবিতাটি এক নিম্নবিত্ত পরিবারের দিনযাপনের কাহিনি। সাধারণ ভাতকাপড়ে আর অসুখে, ধারদেনাতে দিন কাটানাে এই মানুষেরা ‘অল্পে খুশি হয়।কিন্তু সেই খুশির মধ্যে মিশে থাকে এক ধরনের অসহায়তা|তাদের যেহেতু দুঃখ করে কোনাে লাভ নেই, তাই তারা খুশির খোঁজ করে| এই কঠিন বাস্তব থেকে মুক্তি পেতে রাত্তিরে চলে তাদের গাঁজা সেবন। নেশার ঘােরে এ হল দুঃখকে ভুলে থাকার এক আপ্রাণ চেষ্টা। এর মধ্যেও অবশ্য থাকে নিজেদের সাধ-আহ্লাদকে বাঁচিয়ে রাখার চেষ্টা|তাই কোনােদিন বাড়ি ফেরার পথে শখ করে গােলাপচারাও কিনে আনা হয়।
বাড়িতে পোঁতার জায়গা নেই, ফুল হবে কি না তা ঠিক নেই, কিন্তু এত দীর্ঘভাবনা ভাবতে রাজি নয় সামান্য সুখের সন্ধানী এই সব মানুষ হেসে-খেলে কষ্ট করে দিনযাপনের এই কাহিনিই তাে নিম্নবিত্তের রােজনামচা। মাঝে মাঝে সে জীবনও আবার সরলরেখায় চলে না। রাতদুপুরে বাড়ি ফিরে যখন ঠান্ডা ভাতে নুনটুকু পর্যন্ত পাওয়া যায় , তখন প্রবল চিৎকারের মাধ্যমে তাদের রাগের বহিঃপ্রকাশ ঘটে। সেই চিৎকারের মূলে থাকে এক প্রবল আর্তি, যা অনেকটা দাবির মতাে শােনায়—“আমরা তাে সামান্য লােক/আমাদের শুকনাে ভাতে লবণের ব্যবস্থা হােক।” এখানে লক্ষণীয় যে, কবিতার নাম ‘নুন’ হলেও নুনের প্রসঙ্গ প্রত্যক্ষভাবে এসেছে কবিতার একেবারে শেষে এবং তাও মাত্র দুবারের জন্য। একবার অভাব এবং আর-একবার দাবির সূত্র ধরে|
আসলে যে শ্রেণিকে এই কবিতায় কবি তুলে ধরতে চেয়েছেন, তাদের জীবনে অন্ন কোনােরকমে জুটে যায়, ঠান্ডা ভাত’ যার ইঙ্গিত দেয়। কিন্তু বেঁচে থাকা সেখানে আসলে আড়ম্বরহীন সামান্যতম দিনযাপন মাত্র। তাই ভাত ছাড়া অন্য কোনাে ব্যঞ্জনের চিন্তা তাদের মাথাতেও আসে না, তারা প্রত্যাশা করে শুধু একটু নুন’। লক্ষণীয়, কবি একবার অভাবের সূত্রে বলেছেন নুনের কথা— ‘নুন নেই ঠান্ডা ভাতে’, আর যখন দাবি উঠেছে সেখানে ‘নুন’-এর বদলে ব্যবহার করা হয়েছে ‘লবণ’ | ছন্দের প্রয়ােজন থাকলেও’কবি যেন এখানে ভদ্রসমাজের মনের মতাে করেই বার্তাটি দিতে চাইছেন।
এই দাবি তাে তােলা হচ্ছে তথাকথিত শাসক শ্রেণির কাছেই, তাই দাবির ক্ষেত্রে পােশাকি ভাষা বা তৎসম শব্দে প্রয়ােগই উপযুক্ত। দুঃখ-দারিদ্র্য আর মেনে নেওয়ার কাহিনি হলেও সময় কবিতাটি যেন চূড়ান্ত রূপ পেয়েছে শেষে এসে অধিকার ব্যক্ত করার দায় জানানাের সেই সােচ্চার ঘােষণার কেন্দ্রে রয়েছে ‘নুন’—যা গরিব মানুষের জীবনধারণের জন্য ন্যূনতম একটি উপকরণ। তাই কবিতার নামকরণ রে যথার্থ হয়েছে, তাতে কোনাে সন্দেহ নেই।