দুটি-গানের-জন্মকথা-ক্লাস-7-প্রশ্ন-উওর-study-learn
Bengali

দুটি গানের জন্মকথা ক্লাস 7 প্রশ্ন উওর Study Learn

দুটি গানের জন্মকথা ক্লাস 7 প্রশ্ন উওর Study Learn

দুটি গানের জন্মকথা

রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর

জনগণমন অধিনায়ক জয় হে

দুটি গানের জন্মকথা উৎস, বিষয়বস্তু, হাতেকলমে, অতিরিক্ত প্রশ্ন উওর, বোধমূলক ও রচনাধর্মী প্রশ্ন উওর আলোচনা করা হয়েছে।

উৎস

জনগণমন অধিনায়ক জয় হে’ গানটি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের লেখা। গানটির সুরও দিয়েছিলেন রবীন্দ্রনাথ নিজেই। গানটির পাণ্ডুলিপি পাওয়া যায়নি, তবে এ কথা জানা যায় যে, গানটি প্রথম জনসমক্ষে গাওয়া হয় ১৯১১ খ্রিস্টাব্দের ২৭ ডিসেম্বর, ‘ভারতের জাতীয় কংগ্রেস’-এর ২৬তম বার্ষিক অধিবেশনে।

দুটি-গানের-জন্মকথা-ক্লাস-7-প্রশ্ন-উওর-study-learn

দুটি গানের জন্মকথা বিষয়বস্তু:

বিষয়সংক্ষেপ

কবিগুরু রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর তাঁর এই গানের মধ্য দিয়ে জনগণমনের অধিনায়ক অর্থাৎ নিয়ন্তা ভারতভাগ্যবিধাতার বন্দনা করেছেন। পঞ্জাব-সিন্ধু-গুজরাট-মারাঠা- দ্রাবিড় – – উৎকল-বঙ্গ-বিন্ধ্য-আসমুদ্রহিমাচল জেগে ওঠে তাঁর শুভ নামে, কলকল্লোলিত হয়ে ওঠে গঙ্গা-যমুনা।
তাঁর জয়গাথা গেয়ে ভারতের আপামর জনগণ তাঁর শুভ আশিস কামনা করেছে। জনগণের সেই দুঃখতাপহারী মঙ্গলদায়ী ভারতভাগ্যবিধাতার জয়ঘোষণা ধ্বনিত হয়েছে।

দুটি গানের জন্মকথা : হাতেকলমে

১. সংক্ষিপ্ত উত্তর দাও :

[১.১] ভারতবর্ষের জাতীয় সংগীতটি কোন্ উপলক্ষ্যে প্রথম গাওয়া হয়েছিল ?

উত্তর ১৯১১ খ্রিস্টাব্দের ২৭ ডিসেম্বর জাতীয় কংগ্রেসের ২৬তম বার্ষিক সম্মেলনে প্রথম জনসমক্ষে সমবেতকণ্ঠে ভারতের জাতীয় সংগীতটি গাওয়া হয়েছিল।

১.২ ‘তত্ত্ববোধিনী’ পত্রিকায় ভারতবর্ষের জাতীয় সংগীতটির কোন্ পরিচয় দেওয়া হয়েছিল ?

উত্তর ‘তত্ত্ববোধিনী’ পত্রিকায় ভারতবর্ষের জাতীয় সংগীতটিকে ‘ব্রত্মসংগীত’ বলে পরিচয় দেওয়া হয়েছিল।

[১৩] রবীন্দ্রনাথ ‘জনগণমন’র যে ইংরেজি নামকরণ করেন সেটি লেখো।

উত্তর রবীন্দ্রনাথ ‘জনগণমন’র যে ইংরেজি নামকরণ করেন সেটি The Morning song of India.

[১.৪ ভারতবর্ষের জাতীয় মন্ত্রটি কী? সেটি কার রচনা?

উত্তর: ভারতবর্ষের জাতীয় মন্ত্রটি হল ‘বন্দেমাতরম্’। এটি সাহিত্যসম্রাট বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়ের রচনা।

[১.৫] জাতীয় মন্ত্রের প্রথম চারটি পক্তি শিক্ষকের কাছ } থেকে জেনে খাতায় লেখো। উত্তর জাতীয় মন্ত্রের প্রথম চারটি পক্তি হল-

বন্দেমাতরম্
সুজলাং-সুফলাং-মলয়জশীতলাম্‌
শস্যশ্যামলাং মাতরম্।।
শুভ্রজ্যোৎস্না পুলকিত যামিনীম্‌
ফুল্লকুসুমিত দ্রুমদল শোভিনীম্‌
সুহাসিনীং সুমধুর ভাষিণীম্‌
সুখদাং বরদাং মাতরম্।

২.টীকা লেখো : জাতীয় সংগীত, মাঘোৎসব, বিশ্বভারতী, পুলিনবিহারী সেন, ডা. নীলরতন সরকার।

উত্তর জাতীয় সংগীত : প্রত্যেক দেশেরই নিজস্ব জাতীয় সংগীত আছে। যে-কোনো রাষ্ট্রীয় অনুষ্ঠান, স্বাধীনতা দিবস প্রভৃতি নানা অনুষ্ঠানে জাতীয় সংগীত গাওয়া হয়। আমাদের ভারতবর্ষের জাতীয় সংগীতটি হল ‘জনগণমন অধিনায়ক জয় হে’।
বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর এই গানটির রচয়িতা। জাতীয় সংগীত গাওয়ার সময় সকলকে উঠে দাঁড়াতে হয়। আমাদের জাতীয় সংগীতটি পরিবেশন করার সময়সীমা হল ৫২ সেকেন্ড।

মাঘোৎসব : মাঘ মাসে অনুষ্ঠিত ব্রহ্মধর্মাবলম্বীদের অনুষ্ঠান বিশেষই হল মাঘোৎসব। রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের পিতা দেবেন্দ্ৰনাথ প্রতিষ্ঠিত শান্তিনিকেতন’ আশ্রমে সারাবছর ধরে নানা ধরনের উৎসব পালিত হত।
আশ্রমিকদের নিস্তরঙ্গ জীবনে এই উৎসবগুলির তাৎপর্য ছিল অপার। মাঘ মাসের পূর্ণিমা তিথিতে সূচনা হত মাঘোৎসবের। এই উৎসবে নানা ধরনের সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়। ১৩১৮ বঙ্গাব্দের মাঘোৎসবেই প্রথম গাওয়া হয় ‘জনগণমন’ গানটি

বিশ্বভারতী : বিদ্যালয়ের যান্ত্রিকতা ও নীরস আনন্দহীন শিক্ষার হাত থেকে শিক্ষার্থীকে মুক্তি দিতে প্রকৃতির পাঠশালায় ছাত্রদের ডাক দেন রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর। আর সেই উদ্দেশেই বীরভূম জেলার বোলপুরের শান্তিনিকেতনে ১৯০১ প্রতিষ্ঠা করেন বিশ্বভারতী বিশ্ববিদ্যালয়। ১৯৫১ খ্রিস্টাব্দে বিশ্ববিদ্যালয়টি কেন্দ্রীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের মর্যাদা পায় ।

পুলিনবিহারী সেন : ‘বিশ্বভারতী’ বিশ্ববিদ্যালয়ের বিশিষ্ট ছাত্র পুলিনবিহারী সেন বহু প্রবন্ধগ্রন্থের রচয়িতা। রবীন্দ্রনাথের রচনাব্যাখ্যায় তাঁর প্রবন্ধগুলি আজও আদর্শস্থানীয়। পুলিনবিহারী বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথের অত্যন্ত প্রিয় পাত্র ছিলেন। পুলিনবিহারী রচিত ‘রবীন্দ্রায়ণ’ (১৩৬৮) গ্রন্থটি সেসময় দারুণ জনপ্রিয়তা অর্জন করেছিল। রবীন্দ্রনাথের সঙ্গে তাঁর নানা বিষয়ে পত্রালাপ চলত। এমন একটি চিঠি থেকেই ‘জনগণমন’ গানটির উৎস উদ্ধার করা গিয়েছে।

ডা. নীলরতন সরকার : (১৮৬১-১৯৪৩) রবীন্দ্রনাথের সমবয়স্ক ডাক্তার নীলরতন সরকার ছিলেন একজন প্রসিদ্ধ অ্যালোপ্যাথিক চিকিৎসক। দক্ষিণ ২৪ পরগনার ন্যাতরা গ্রামে তিনি জন্মগ্রহণ করেন। স্বদেশি শিল্প-ব্যাবসা ও বহুজনহিতকর কাজের জন্য তৎকালে নীলরতন সরকারের ভূমিকা ছিল অগ্রগণ্য। তাঁর প্রতিষ্ঠিত হাসপাতালে আজও বহু মুমূর্ষুর চিকিৎসা হয়। দীর্ঘদিন কলিকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ে অধ্যাপনা করেছেন তিনি । ব্রিটিশ সরকারের কাছ থেকে তিনি পেয়েছিলেন ‘নাইট’ উপাধি।

৩. নীচের প্রশ্নগুলির উত্তর নিজের ভাষায় লেখো :

৩.১ ‘জনগণমন’কে জাতীয় সংগীতরূপে গ্রহণ করতে বিরোধিতা হয়েছিল কেন? রবীন্দ্রনাথের ব্যাখ্যায় সেই বিরোধিতার অবসান কীভাবে ঘটেছিল ?

‘উওর:- জনগণমন’কে জাতীয় সংগীত হিসেবে গ্রহণের প্রস্তাব উত্থাপিত হলে রবীন্দ্রনাথের বিরোধীগণ প্রচার করেন, গানটি সম্রাট পঞ্চম জর্জের ভারতে আগমনকে উপলক্ষ্য করে রচিত। এই কারণে জাতীয় সংগীতরূপে জনগণমন’ গানটিকে গ্রহণ করতে বিরোধিতা হয়েছিল।

বিশ্বভারতীর প্রাক্তন ছাত্র পুলিনবিহারী সেন গানটি রচনার জানান যে, কবির কোনো এক রাজসরকারে প্রতিষ্ঠাবান বন্ধু ভারতসম্রাটের আগমন উপলক্ষ্যে তাঁকে গান রচনা করতে অনুরোধ করলে তিনি গানটি রচনা করেন।

কিন্তু গানের সেই ‘ভারতভাগ্যবিধাতা’ যিনি জনগণের অন্তর্যামী পথপরিচালক, যুগযুগান্তরের মানবভাগ্য পরিচালক, তিনি কোনো পঞ্চম বা ষষ্ঠ বা কোনো জর্জই হতে পারেন না। এ কথা সেই রাজভক্ত বন্ধুটিও বুঝেছিলেন। এইভাবেই সেই বিরোধিতার অবসান ঘটেছিল। ৩. ‘

৩.২ রবীন্দ্রনাথ গানটিকে পরেও নানা উপলক্ষ্যে ব্যবহার করেছেন।’—১৯১১ খ্রিস্টাব্দের পরবর্তী সময়ে রবীন্দ্রনাথ কীভাবে এই গানটি ব্যবহার করেন?

উত্তর:- ১৯১৯ খ্রিস্টাব্দে দক্ষিণ ভারত পরিক্রমায় বেরিয়ে রবীন্দ্রনাথ যান মদনপল্লী। সেখানকার থিয়োসফিক্যাল কলেজ’-এর অধ্যক্ষ এবং রবীন্দ্রবন্ধু জেমস এইচ. কাজিস তাঁর সম্মানে এক সভার আয়োজন করেন। সেই সভায় রবীন্দ্রনাথ গানটি গেয়েছিলেন।

এর ১১ বছর পর ১৯৩০ খ্রিস্টাব্দের সেপ্টেম্বরে রবীন্দ্রনাথ জেনিভা থেকে যান সোভিয়েত রাশিয়া। মস্কোয় ‘পায়োনিয়ার্স কমিউন’-এ অনাথ বালক-বালিকারা তাঁকে অভ্যর্থনা জানায়। সেখানেও তাদের অনুরোধে রবীন্দ্রনাথ গানটি গেয়েছিলেন। এইভাবে ১৯১১ খ্রিস্টাব্দের পরবর্তী সময়ে রবীন্দ্রনাথ গানটি ব্যবহার করেন।

দুটি গানের জন্মকথা : অতিরিক্ত প্রশ্নোত্তর

নৈর্ব্যক্তিক প্রশ্নোত্তর

সঠিক উত্তর নির্বাচন করো

উত্তর

১. মদনপল্লীতে যেমন এইচ. কাজিন্‌স রবীন্দ্রনাথের সম্মানে যে সভার আয়োজন • করেছিলেন সেখানে তিনি ‘জনগণমন’ গানটির নামকরণ করেছিলেন—(অ্যাসেম্বলি সং অফ ইন্ডিয়া/দ্য ইভনিং সং অফ ইন্ডিয়া /দ্য মর্নিং সং অফ ইন্ডিয়া/দ্য ন্যাশনাল সং অফ ইন্ডিয়া)

উওর:- দ্য মর্নিং সং অফ ইন্ডিয়া ।

অতিসংক্ষিপ্ত প্রশ্নোত্তর

১. ‘জনগণমন অধিনায়ক জয় হে’ গানটির রচয়িতা কে?

উত্তর:- জনগণমন অধিনায়ক জয় হে’ গানটির রচয়িতা হলেন রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর।

২. ‘জনগণমন অধিনায়ক জয় হে’ গানটি প্রথম কবে গাওয়া হয়েছিল?

উত্তর:- জনগণমন অধিনায়ক জয় হে’ গানটি প্রথম গাওয়া হয়েছিল ১৯১১ খ্রিস্টাব্দের ২৭ ডিসেম্বর।

‘৩. জনগণমন অধিনায়ক জয় হে’ গানটির প্রথম পরিচয় কী ছিল ?

উত্তর:- জনগণমন অধিনায়ক’ গানটির প্রথম পরিচয় ছিল এই যে, এটি একটি ব্রত্মসংগীত ।

৪ জনগণের মনের অধিনায়ক হিসেবে কার জয় ঘোষণা করা হয়েছে?

উত্তর:- জনগণের মনের অধিনায়ক হিসেবে ভারতভাগ্যবিধাতার জয় ঘোষণা করা হয়েছে।

৫ ভারতভাগ্যবিধাতার কাছে কী প্রার্থনা করা হয়েছে?

উত্তর:- ভারতভাগ্যবিধাতার কাছে শুভ আশিস প্রার্থনা করা হয়েছে।

একমুখী তথ্যানুসন্ধানী প্রশ্নোত্তর দুটি বা তিনটি বাক্যে উত্তর লেখো:

১. ভারতভাগ্যবিধাতাকে কী কী অভিধায় ভূষিত করা হয়েছে?

উত্তর:- কবিগুরু তাঁর সংগীতের আলোচ্য অংশে ভারতভাগ্যবিধাতা’র জয় ঘোষণা করেছেন। আর সেই প্রসঙ্গেই ভারত ভাগ্যবিধাতাকে ‘জনগণমন অধিনায়ক’ ও ‘জনগণমঙ্গলদায়ক’ প্রভৃতি অভিধায় ভূষিত করা হয়েছে।

‘২. তব শুভ নামে জাগে—কারা জেগে ওঠে ?

উত্তর ভারতবাসী তথা সমগ্র জাতির ভাগ্যনির্মাতা, সেই সৃষ্টিকর্তা পরমেশ্বরের শুভ নামে ভারতভূমির পঞ্জাব-সিন্ধু-গুজরাট-মারাঠা- দ্রাবিড়-উৎকল-বঙ্গবাসী, এক অর্থে আসমুদ্রহিমাচলের জনগণ জেগে ওঠে।

৩ . কার কার তরঙ্গোচ্ছ্বাসে ভারতভূমি স্নিগ্ধ ও প্রাণবন্ত হয়ে ওঠে?

উত্তর গঙ্গা ও যমুনা প্রধানত এই দুই স্রোতস্বিনীর তরঙ্গোচ্ছ্বাসে { ভারতভূমি স্নিগ্ধ ও প্রাণবন্ত হয়ে ওঠে।

৪ ‘জনগণমন অধিনায়ক জয় হে’ গানটি সম্পর্কে রবীন্দ্রনাথের বিরোধীগণ কী প্রচার করেছিলেন ?

উত্তর:- গানটি ভারতের জাতীয় সংগীত হিসেবে গ্রহণের প্রস্তাব উত্থাপিত হলে রবীন্দ্রনাথের বিরোধীগণ প্রচার করেন যে, গানটি সম্রাট পঞ্চম জর্জের ভারতে আগমনকে উপলক্ষ্য করে রচিত।

দুটি গানের জন্মকথা : বোধমূলক প্রশ্নোত্তর

কমবেশি ছ-টি বাক্যে উত্তর লেখো

জেগে ওঠে।

১.ভারতভাগ্যবিধাতা’র প্রকৃত স্বরূপ কী? কবিতানুসারে বুঝিয়ে লেখো।

উত্তর ‘ভাগ্য’ অর্থাৎ অদৃষ্ট বা নিয়তি আর ‘বিধাতা’ হলেন জগতের স্রষ্টা। তাই ভারতভাগ্যবিধাতা হলেন ভারতভূমির নিয়তি নির্ধারণকারী সেই পরম স্রষ্টা, এক অর্থে পরমেশ্বর। সেই পরম পিতাই হলেন জনগণের অন্তরের পরিচালনা শক্তি। আবার তিনিই আপামর জনগণের মঙ্গলসাধনকারী। তাঁরই জয়বন্দনা করা হয়েছে আলোচ্য কবিতায় ।

২. তব শুভ নামে জাগে, তব শুভ আশিস মাগে, গাহে তব জয়গাথা।’ — ‘তব’ বলতে কাকে অভিহিত করা – হয়েছে? উদ্ধৃতাংশের ব্যাখ্যা লেখো ।

উত্তর কবিগুরু রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের আলোচ্য ‘জনগণমন অধিনায়ক জয় হে’ গানে ‘তব’ অর্থাৎ সেই জগৎস্রষ্টা পরমেশ্বরকে অভিহিত করা হয়েছে।

তিনি সকল চিন্তা ও কর্মের নিয়ন্তা হয়ে আপামর জনগণের অন্তরে রাজরাজেশ্বরের আসনে অধিষ্ঠিত। সেই চিরসাথী ভারতভাগ্যবিধাতা হয়ে ভারতভূমির ‘উচ্ছলজলধিতরঙ্গ’-এ ভরিয়ে তোলে। আর সকল ভারতবাসী আসমুদ্রহিমাচল তাঁরই শুভ নামে জেগে, শুভ আশিস প্রার্থনা করে জয়গান গায় ।

৩. “গাহে তব জয়গাথা”- -জয়গাথা গাওয়ার কারণ কী ?

উত্তর:- ‘জয়গাথা’ কথাটির অর্থ জয়গান করা অর্থাৎ গুণকীর্তন করা। যিনি সমগ্র জাতির দুঃখতাপহারী, জনগণের অন্তর্যামী হয়ে সুপথে পরিচালিত করেন, সেই মঙ্গলময় জগদীশ্বরের বন্দনা করার মধ্য দিয়ে তাই তাঁরই শুভ নামে জেগে ওঠা সমগ্র ভারতবাসী তাঁরই জয়গান গেয়েছে।

৪. “জনগণমঙ্গলদায়ক জয় হে ভারতভাগ্যবিধাতা ! জয় হে, জয় হে, জয় হে, জয় জয় জয়, জয় হে।।”— উদ্ধৃতাংশের তাৎপর্য লেখো ।

উত্তর কবিগুরু রচিত ‘জনগণমন অধিনায়ক জয় হে’ গান থেকে গৃহীত প্রশ্নোক্ত অংশটিতে কবি ভারতভাগ্যবিধাতার জয় ঘোষণা করেছেন। যিনি জনগণের দুঃখযন্ত্রণায়, হতাশায়, বিপদে ত্রাতারূপে অবতীর্ণ হয়ে তাদের উদ্ধার করেন, তিনি জগদীশ্বর পরমপিতা। তিনি সকলের মঙ্গল করে থাকেন। সেই ভারতভাগ্যবিধাতারূপী মঙ্গলময় পরমেশ্বরের জয়ঘোষণা কবির একার নয়, সকল ভারতবাসী তথা বিশ্ববাসীর।

দুটি গানের জন্মকথা: রচনাধর্মী প্রশ্নোত্তর

কমবেশি আট-দশটি বাক্যে উত্তর লেখো

জাতীয় সংগীত হিসেবে জনগণমন অধিনায়ক জয় হে’ কতটা সার্থক, তা বিচার করো।

উত্তর জাতীয় সংগীত হল সেই প্রশস্তিসূচক সংগীত, যার মধ্য দিয়ে কোনো জাতির ইতিহাস-সংস্কৃতি-গৌরবগাথা-মনন-চিন্তন প্রভৃতি প্রকাশ পায়। আর ভারতবর্ষ যেহেতু দর্শন ও অধ্যাত্মবাদের পীঠস্থান, সেহেতু তার অন্তরাত্মায় যে পরমেশ্বরের প্রতি ঐকান্তিক শ্রদ্ধা ও ভক্তি ভাস্বর থাকবে তা প্রাসঙ্গিক। এই গানের মধ্য দিয়ে সেই বৈচিত্র্যের মধ্যে ঐক্যসাধনকারী ভারতভাগ্যবিধাতারূপী পরমেশ্বরের জয়ঘোষণা করা হয়েছে। এখানে তিনি জনগণের মনের রাজরাজেশ্বর ও ‘মঙ্গলদায়ক’ রূপে অবতীর্ণ । তাই কবিগুরুর এই গানটি জাতীয় সংগীত হিসেবে সম্পূর্ণ সার্থক, একথা বলা যায় ।

২. কবিগুরুর জনগণমন অধিনায়ক জয় হে’ গানে প্রকাশিত ভারতবর্ষের ভূপ্রাকৃতিক গঠনের পরিচয় দাও।

উত্তর:- কবিগুরুর এই ‘জনগণমন অধিনায়ক জয় হে’ গানে ভারতবর্ষের ভূপ্রাকৃতিক গঠনের পরিচয় পাওয়া যায়। তার একদিকে রয়েছে সুউচ্চ হিমালয় পর্বতমালা ও তার পাদদেশে দীর্ঘবিস্তৃত হিমাচল প্রদেশ। অন্যদিকে গঙ্গা-যমুনা বিধৌত উর্বরা উপত্যকাভূমি।

আবার পঞ্চনদের দেশ পাঞ্জাব ও সিন্ধু-উপত্যকা ভূমি যেমন ভারতভূমির সজীবতা ও প্রাণচঞ্চলতার পরিচয় দেয়, তেমন মারাঠা-দ্রাবিড়দের কঠোর রূপ প্রকাশ পেয়েছে। একদিকে বিন্ধ্য, হিমাচল, গুজরাট অন্যদিকে বাংলা, বিহার, ওড়িশা— কঠিনে-কোমলে মিশ্রিত ভারত-আত্মার এক প্রাণ ও এক সুরে ধ্বনিত হয় সেই পরমাত্মারই জয়গান।

___________________

আমার সোনার বাংলা আমি তোমায় ভালোবাসি

রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর

উৎস

প্রথমে সুনির্দিষ্ট কোনো গ্রন্থে গানটি ছিল না। জানা যায় বঙ্গভঙ্গের প্রাক্কালে ১৯০৫ খ্রিস্টাব্দে তাৎক্ষণিক আবেগে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর গানটি রচিত হয় এবং ভক্তদের মাধ্যমে থেকে গীত হয়ে তা সমগ্র কলকাতায় ছড়িয়ে পড়ে।

বিষয়সংক্ষেপ

কবিগুরু রবীন্দ্রনাথ তাঁর প্রাণের চেয়েও প্রিয় দেশমাতৃকাকে সোনার মতো মহামূল্যবান রত্নের সঙ্গে তুলনা করেছেন ‘আমার

সোনার বাংলা আমি তোমায় ভালোবাসি’ গানে। এই বাংলার দিগন্তবিস্তৃত উন্মুক্ত-উদার আকাশ ও প্রাণদায়ী বাতাসকে কবি ভালোবেসেছেন হৃদয় দিয়ে। ফাল্গুনের আমের বোলের গন্ধ, অঘ্রান মাসের শস্যভরা খেতের সুবাসে তিনি দেখতে পেয়েছেন বঙ্গজননীর অপরূপ মধুর হাসি। বটের মূলে, নদীর কুলে কুলে স্নেহের আঁচল দিয়ে বঙ্গজননী বিছিয়ে দেন ছায়াঘেরা

সুশীতলতা। বঙ্গমায়ের সুখের বাণী কবির কানে সর্বদাই অমৃতসুধা বর্ষণ করে। এই মায়ের মুখমণ্ডল দুঃখকষ্টে বা অপমানে মলিন হলে সন্তান হিসেবে কবি মর্মাহত হন এবং তার চোখ জলে ভরে যায়।

অতিসংক্ষিপ্ত প্রশ্নোত্তর

১. ‘আমার সোনার বাংলা আমি তোমায় ভালোবাসি’ গানটির রচয়িতা কে?

উওর:- আমার সোনার বাংলা আমি তোমায় ভালোবাসি’ গানটির রচয়িতা হলেন—রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর।

২. বাংলাদেশ স্বাধীন রাষ্ট্র হলে কোন্ গানের কতগুলি পক্তি জাতীয় সংগীত হিসেবে গৃহীত হয়েছে?

উওর:-বাংলাদেশ স্বাধীন রাষ্ট্র হলে ‘আমার সোনার বাংলা আমি তোমায় ভালোবাসি’ গানটি পুরোটাই বাংলাদেশের জাতীয় সংগীত হিসেবে গৃহীত হয়েছে ।

৩. মায়ের মুখের বাণী কবির কাছে কেমন লাগে ?

উওর:- মায়ের মুখের বাণী কবির কাছে সুধার মতো লাগে ৷

৪ অঘ্রানের ভরা খেতে কবি কী দেখেছেন ? কবির প্রাণে কে বাঁশি বাজায় ?

উওর:-• অঘ্রানের ভরা খেতে কবি বাংলা মায়ের মধুর হাসি দেখেছেন।

৫. কবির প্রাণে কে বাঁশি বজায়?

উওর:-• বাংলা মায়ের আকাশ-বাতাস কবির প্রাণে বাঁশি বাজায়।

একমুখী তথ্যানুসন্ধানী প্রশ্নোত্তর

দুটি বা তিনটি বাক্যে উত্তর লেখো

১.কবির নয়নজলে ভাসার কারণ কী ?

উত্তর কোনো কারণে বাংলা মা দুঃখিত হলে বা তাঁর মুখ মলিন হলে সন্তান হিসেবে কবি নয়নজলে ভাসেন ।

২. কবির প্রাণে বাঁশি বাজায় কারা? তা কতদিন ধরে ?

৩. রবীন্দ্রনাথের গান সম্পর্কে সরলাদেবীর অভিমত কী ?

উওর:। সরলা দেবী তাঁর ‘জীবনের ঝরাপাতা’য় লিখেছেন, তিনি মাঝিদের কাছ থেকে যেসব গান শুনতেন, তা তাঁর রবিমামাকে শোনাতেন। তাঁর রবিমামা সেই গানের সুর ভেঙে, কখনো-কখনো তার কথাগুলিরও কাছাকাছি দিয়ে গিয়ে এক-একখানি নিজের গান রচনা করতেন। ‘
কোন আলোকে প্রাণের প্রদীপ…’, ‘যদি তোর ডাক শুনে কেউ না আসে…’, ‘আমার সোনার বাংলা…’ প্রভৃতি অনেক গান সেই মাঝিদের কাছ থেকে আহরিত সরলাদেবীর সুরে বসান।

৪ আমার সোনার বাংলা, আমি তোমায় ভালোবাসি।’ গানটি সম্পর্কে প্রশান্তকুমার পালের অনুমান কী ?

উত্তর প্রশান্তকুমার পাল অনুমান করেছেন, বঙ্গভঙ্গের নির্দিষ্ট তারিখটি জানতে পারার তাৎক্ষণিক আবেগে গানটি রচিত হয় ও ভক্তদের মাধ্যমে গানটি সমগ্র কলকাতায় ছড়িয়ে পড়ে।

ৰোধমূলক প্রশ্নোত্তর

কমবেশি ছ-টি বাক্যে উত্তর লেখো

‘১. আমার সোনার বাংলা’- কবির সোনার বাংলা কোন্ অর্থে বুঝিয়ে দাও ৷

উত্তর:- ‘সোনা’ অর্থে মূল্যবান বস্তু। মহার্ঘ্য সোনার চেয়েও বঙ্গদেশ কবির কাছে মূল্যবান। বাংলাকে কবি মাতৃসম্বোধনে সম্মানিত করেছেন। এই মায়ের প্রতি কবির মমত্ববোধ অপরিসীম। মায়ের সেই অপরূপ সৌন্দর্যরাশি গাছপালা, আকাশ-বাতাস, নদনদীী-সহ শ্যামলিমার ছবি কবিমনকে সোহাগে ভরিয়ে তুলেছে। কবি মুগ্ধ, অভিভূত, তাই ‘সোনার বাংলা” বলেছেন।

২ আমি তোমায় ভালোবাসি।’—কবি কেন এই বাংলাকে ভালোবেসেছেন?

উত্তর:- বহুগুণে গুণান্বিত মাকে সন্তান হিসেবে কবি ভালোবাসেন । তা ছাড়া এমন উদার আকাশ-বাতাস, নিবিড় স্নেহময় ছায়াশীতল বটবৃক্ষ তো মায়ের কোলের সমান। সেই মায়ের আনন্দে কবি আনন্দিত হন, আর তাঁর বেদনায় চোখের জলে কবি ভেসে যান। তাই কবি তাঁকে এমন আন্তরিকভাবে ভালোবাসেন ।

৩. “আমার সোনার বাংলা, আমি তোমায় ভালোবাসি”—তাৎপর্য লেখো।

উত্তর ‘মাতৃরূপেন জন্মভূমি’র প্রতি কবির গভীর শ্রদ্ধা ও ভক্তি প্রকাশ পেয়েছে। দেশমাতৃকার প্রতি ঐকান্তিক ভালোবাসা গানটির ভাবরসকে সমৃদ্ধ করেছে। বাংলা যে সোনার দেশ, চিত্ররূপময় ও স্নিগ্ধ-সরস আন্তরিকতায় ভরপুর, তা কবিতার মূল ভাবটিকে ধরতে সাহায্য করেছে। মায়ের আনন্দে কবি আনন্দিত, আর দুঃখে সমব্যথী হয়ে চোখের জলে ভাসেন কবি ।

৪ ‘মা তোর মুখের বাণী আমার কানে লাগে সুধার মতো,’–তাৎপর্য লেখো।

ডিত্তর ‘মধুর আমার মায়ের হাসি সুধার মতো লাগে’—মায়ের মুখের বাণী সুধার মতো কানে বাজে। মাতৃভাষা অমৃতসম। এ ভাষার সঙ্গে অন্তরের যোগ। তাই কবি বলেছেন, বাংলা মায়ের মুখের বাণী কবির অন্তরে সুধার সঞ্চার করে। পাখির কাকলি বা পত্রের মর্মর শব্দ যেন সুধামাখা বাণী ।

রচনাধর্মী প্রশ্নোত্তর

কমবেশি আট-দশটি বাক্যে উত্তর লেখো

১. আমার সোনার বাংলা, আমি তোমায় ভালোবাসি।” গানটিতে কবি বাংলা মায়ের যে অপরূপ শোভার বর্ণনা দিয়েছেন, তা নিজের ভাষায় লেখো।

উত্তরা কবিগুরু রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর এই গানটির মধ্য দিয়ে তিলোত্তমা বাংলার অপরূপ সৌন্দর্য প্রকাশ করেছেন। কবি অন্তর দিয়ে এই উন্মুক্ত নীলাকাশ ও প্রাণদাত্রী বাতাসকে ভালোবেসেছেন

তারই মধুর আবেশে কবির অন্তরে যেন মধুর বাঁশি বাজে। ফাল্গুনে আমের বনের গন্ধে, ভরা অঘ্রানে খেতের ফসলের সুবাসে কবি বিমুগ্ধ। নদীর কূলে, বটের মূলে শ্যামলী বাংলার যে শোভা, তা যেন মায়ের স্নেহাঞ্চল বিছানো।
পাখপাখালির কুজন বা পত্রের মর্মরধ্বনির শব্দ যেন সুধামাখা বাণী। এইভাবে প্রকৃতির শোভা, স্নেহচ্ছায়া ও মায়ামমতায় জড়িয়ে আছে সোনার বাংলার অপরূপ দৃশ্য

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *