মন্দ-উপমাযুক্তির-দৃষ্টান্ত-দাও-দর্শন-Study-Learn
Philosophy

মন্দ উপমাযুক্তির দৃষ্টান্ত দাও দর্শন Study Learn

মন্দ উপমাযুক্তির দৃষ্টান্ত দাও দর্শন Study Learn

মন্দ উপমাযুক্তির দৃষ্টান্ত

প্রশ্ন । মন্দ উপমাযুক্তির দৃষ্টান্ত দাও।

.মন্দ উপমাযুক্তির দৃষ্টান্ত ● উত্তর : মানুষের মতো গ্রামোফোনের বুদ্ধি আছে ; কারণ মানুষের মতো এটি গান করতে পারে, হাসতে পারে, কথা বলতে পারে।

মন্তব্য : এটি মন্দ উপমা যুক্তি ; মানুষের সঙ্গে যন্ত্রের তুলনা করা হাস্যকর ব্যাপার। • মন্দ উপমা যুক্তির অতিরিক্ত দৃষ্টান্ত :

মন্দ-উপমাযুক্তির-দৃষ্টান্ত-দাও-দর্শন-Study-Learn

(১) মানুষের মতো মৌমাছিরা বাসস্থান তৈরি করতে পারে। সুতরাং, মানুষের মতো মৌমাছিরাও বুদ্ধিমান।

মন্তব্য : বাসস্থান নির্মাণের ভিত্তিতে মানুষের সঙ্গে মৌমাছির তুলনা করা যায় না। মানুষ তার প্রয়োজন অনুসারে বিভিন্ন ধরনের বাসস্থান নির্মাণ করতে পারে। কিন্তু মৌমাছিরা কেবল একপ্রকার মৌচাক নির্মাণ করে এবং তা তারা সহজাত প্রবৃত্তির বশে করে।

(২) মানুষের মতো নিম্নশ্রেণির প্রাণীদের জীবন আছে। সুতরাং, তাদেরও মানুষের মতো সুখ-দুঃখ আছে।

মন্তব্য : এটি উত্তম উপমা যুক্তি। কারণ জীবনের সঙ্গে সুখ-দুঃখের অবস্থার একটা আবশ্যিক সম্বন্ধ আছে। মানুষও প্রাণী। কাজেই, মানুষের মতো নিম্নশ্রেণির প্রাণীদের অনুভূতি থাকাই স্বাভাবিক।

(৩) শুল্ক-প্রাচীর (tariff walls) ব্যাবসা-বাণিজ্যের অন্তরায়, কারণ প্রাচীর সব ক্ষেত্রেই যোগাযোগের অন্তরায়।

মন্তব্য : এটি একটি মন্দ উপমা যুক্তি। কারণ দেওয়াল বাধা হলেও এটি আশ্রিতদের রক্ষা করে। শুল্ক-প্রাচীরও দেশীয় শিল্পকে রক্ষা করে। তবু সাদৃশ্য দুটিকে অতিরঞ্জিত করা হয়েছে।

(৪) নিম্নতর প্রাণীরা মানুষের মতোই যন্ত্রণা বোধ করে।

মন্তব্য : এটি উত্তম উপমা যুক্তি। মানুষের সঙ্গে নিম্নতর প্রাণীর শ্রেণিগত সাদৃশ্য থাকায় মানুষের যন্ত্রণা বোধ থেকে নিম্নতর প্রাণীদেরও যন্ত্রণা বোধ আছে, এই অনুমান যুক্তিযুক্ত। বাক্যে প্রকাশ করতে না পারলেও সব প্রাণীর যন্ত্রণা বোধ থাকা স্বাভাবিক।

(৫) ছোটো শিশুর মতো এই ছোটো চারাগাছটির জন্ম ও বৃদ্ধি আছে। সুতরাং, মানবশিশুর মতো চারাগাছটির চিন্তাশক্তি আছে।

মন্তব্য : এটি মন্দ উপমা যুক্তি । এই যুক্তিতে সাদৃশ্যমূলক ধর্ম ও অনুমিত ধর্মের মধ্যে কোনো আবশ্যিক সম্বন্ধ নেই। কোনো কিছুর জন্ম, বৃদ্ধি, মৃত্যু থাকলেই তার চিন্তাশক্তি থাকবে এমন কথা বলা যায় না। তা ছাড়া চিন্তাশক্তি কেবল মানুষেরই আছে। উদ্ভিদ বা অন্য প্রাণীর নেই।

(৬) পৃথিবীর সঙ্গে মঙ্গল গ্রহের বিভিন্ন বিষয়ে সাদৃশ্য লক্ষ করা গেছে। পৃথিবীতে জীবের অস্তিত্ব আছে। অতএব, মঙ্গলগ্রহে জীবের অস্তিত্ব আছে।

মন্তব্য : এটি উত্তম উপমা যুক্তি। কারণ দুটি গ্রহের মধ্যে গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ে সাদৃশ্য আছে। পৃথিবীর মতো মঙ্গলে বায়ুমণ্ডল আছে, জল, স্থল আছে। উভয় গ্রহের জলবায়ুর প্রকৃতি, তাপমাত্রা প্রায় সমান। গ্রহ দুটি সূর্যের চারিদিকে প্রদক্ষিণ করে, উভয়ে সূর্য থেকে আলোক সংগ্রহ করে। পৃথিবীতে জীবনের অস্তিত্ব আছে। অতএব, মঙ্গলগ্রহেও জীবনের অস্তিত্ব থাকা স্বাভাবিক।

(৭) রাম ও শ্যাম সমবয়সী, একই স্কুলে পড়ে, একই গৃহশিক্ষকের কাছে পড়ে। রাম প্রথম বিভাগে উত্তীর্ণ হয়েছে। অতএব শ্যামও প্রথম বিভাগে উত্তীর্ণ হবে।

মন্তব্য : এটি দুষ্ট উপমা যুক্তি। রাম ও শ্যামের মধ্যে যে সাদৃশ্যের কথা বলা হয়েছে তা মৌলিক নয়। দুজনের মধ্যে গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ে বৈসাদৃশ্য থাকার সম্ভাবনা বিচার করা হয়নি। সমবয়সী হলে বা একই স্কুল বা একই গৃহশিক্ষকের কাছে পড়লেই দুজনের মেধা সমান হয় না। কাজেই, রাম প্রথম বিভাগে উত্তীর্ণ হয়েছে বলে শ্যাম প্রথম বিভাগে উত্তীর্ণ হবে, একথা বলা যায় না।

(৮) মানুষের মতো উদ্ভিদের জন্ম, বৃদ্ধি, বিনাশ আছে। মানুষের যেমন বুদ্ধি আছে উদ্ভিদেরও সেরকম বুদ্ধি থাকবে, একথা বলা যায়।

মন্তব্য : উদ্ভিদ ও মানুষের মধ্যে যে সাদৃশ্য ধর্ম ও অনুমিত ধর্মের কথা বলা হয়েছে তাদের মধ্যে কোনো আবশ্যিক সম্বন্ধ নেই। দুটির মধ্যে জন্ম, বৃদ্ধি, বিনাশ দেখে বলা যায় না যে, মানুষের বুদ্ধি আছে বলে উদ্ভিদেরও বুদ্ধি থাকবে। তাছাড়া প্রাণীকুলের মধ্যে কেবল মানুষেরই বুদ্ধি আছে। উদ্ভিদের জীবন আছে, চিন্তাশক্তি নেই।

(৯) রাম ও শ্যাম দুই যমজ ভাই, রামের বুদ্ধ্যঙ্ক 120, উত্তম স্মৃতিশক্তির অধিকারী, পড়াশোনায় মনোযোগী, গণিতে দক্ষ। শ্যামের বুদ্ধ্যঙ্ক 120, পড়াশোনায় মনোযোগী, উত্তম স্মৃতিশক্তির অধিকারী। সুতরাং, শ্যামও গণিতে দক্ষ হবে।

মন্তব্য : এটি উত্তম উপমা যুক্তি। হেতুবাক্যে যে সব ধর্মের উল্লেখ করা হয়েছে সেগুলির ভিত্তিতে এই রকম সিদ্ধান্ত গঠন!করা যুক্তিযুক্ত। তবে রাম গণিতে দক্ষ বলে শ্যামও গণিতে দক্ষ হবে, এমন কথা সুনিশ্চিতভাবে বলা যায় না। শ্যাম গণিতে দক্ষ না হয়ে ইতিহাসে বা ভূগোলে দক্ষ হতে পারে।

(১০) গাছের মতোই কারখানার জন্ম ও বৃদ্ধি আছে। গাছের প্রাণ আছে। সুতরাং, কারখানার প্রাণ আছে।

মন্তব্য ঃ এটি দুষ্ট উপমা যুক্তি। গাছ, উদ্ভিদ, কারখানা বিমূর্ত ধারণা। শ্রেণিগত চরিত্র দুটির ভিন্ন। কাজেই, অনুমিত সাদৃশ্য ও উপমিত সাদৃশ্যের মধ্যে কোনো

সম্বন্ধ নেই। উদ্ভিদের সঙ্গে কারখানার তুলনা করা চলে না। কারখানার প্রাণ থাকতে পারে না।

(১১) মানুষের মন্তব্য : মতো যখন গাছের প্রাণ আছে তখন মানুষের মতো গাছের চিন্তাশক্তি আছে। যুক্তিটি দুষ্ট উপমা যুক্তি। মানুষের মতো গাছের প্রাণ থাকলেও চিন্তাশক্তি কেবল মানুষের আছে। এক্ষেত্রে অনুমিত সাদৃশ্য ও উপমিত সাদৃশ্যের মধ্যে কোনো আবশ্যিক সম্বন্ধ নেই।

(১২) রাষ্ট্র জীবদেহ সদৃশ। জীবদেহের মৃত্যু আছে। কাজেই রাষ্ট্রের মৃত্যু আছে।

মন্তব্য ঃ আলংকারিক অর্থে রাষ্ট্রকে জীবদেহের সঙ্গে তুলনা করা হয়। রাষ্ট্র একটি বিমূর্ত ধারণা। রাষ্ট্রের সঙ্গে জীবদেহের তুলনা করা যায় না। এই ক্ষেত্রে অনুমিত সাদৃশ্য ও উপমিত সাদৃশ্যের মধ্যে কোনো আবশ্যিক সম্বন্ধ নেই। সুতরাং, এটি মন্দ উপমা যুক্তি।

(১৩) জীবদেহের মতো জাতির জন্ম, বর্ধন ও লয় আছে। সুতরাং, জাতিও এক জীবদেহ। মন্তব্য : আলংকারিক সাদৃশ্যের ভিত্তিতে দুটির মধ্যে প্রকৃত সাদৃশ্য অনুমিত হয়েছে। ______ কাজেই এটি মন্দ উপমা যুক্তি। জাতি একটি বিমূর্ত ধারণা। জীবদেহ মূর্ত ধারণা। একটির সঙ্গে অন্যটির তুলনা করা চলে না। FRAS

(১৪) একটি দেশের রাজধানীর সঙ্গে জীবদেহের হৃৎপিণ্ডের বহু সাদৃশ্য আছে। সুতরাং, রাজধানীর আয়তন বৃদ্ধি পেলে রাজধানীর রোগ বলেই মনে করতে হবে।

মন্তব্য : রাজধানাকে আলংকারিক অর্থে : রাজধানীকে আলংকারিক অর্থে জীবদেহের হৃৎপিণ্ডের সঙ্গে তুলনা করা হয়েছে। কাজেই এই আলংকারিক সাদৃশ্যের ভিত্তিতে দুটির মধ্যে প্রকৃত সাদৃশ্য অনুমান করা যুক্তিযুক্ত নয়। সুতরাং, এটি দুষ্ট উপমা যুক্তি। হৃৎপিণ্ডের আয়তন বৃদ্ধি একটা রোগ। কিন্তু রাজধানীর আয়তন বৃদ্ধি রোগ নয়। জীবের কেবল রোগ হয়। রাজধানী একটি বিমূর্ত ধারণা। রাজধানীর রোগ হয় না। (lasthysic) (১৫) দুটি বৃক্ষের মধ্যে উচ্চতা, পুষ্প, পত্র, শাখা-প্রশাখা বিষয়ে সাদৃশ্য আছে। একটির ফল

মিষ্ট, সেহেতু অপরটির ফল মিষ্ট হবে।

মন্তব্য ঃ এটি মন্দ উপমা যুক্তি। দুটি বৃক্ষের সাদৃশ্যের বিষয়গুলি গুরুত্বপূর্ণ নয়। তা ছাড়া মৃত্তিকার উপাদান ফলের মিষ্টতার অন্যতম শর্ত। দুটি বৃক্ষের মৃত্তিকার রাসায়নিক উপাদান ভিন্ন হলে একই জাতীয় দুটি গাছের ফলের স্বাদ ভিন্ন হয়। সুতরাং, সিদ্ধান্তের সম্ভাব্যতার পরিমাণ খুবই কম।

(১৬) উপনিবেশগুলি ফলের মতো। ফল পাকলে যেমন গাছ থেকে পড়ে যায়, তেমনি উপনিবেশগুলি উন্নত হলে দেশ থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে যায়।

মন্তব্য ঃ এটি দুষ্ট উপমা যুক্তি। কোনো দেশের উপনিবেশগুলি আলংকারিক অর্থে বৃক্ষের ফলের মতো। কাজেই এই আলংকারিক সাদৃশ্যের ভিত্তিতে দুটির মধ্যে

প্রকৃত সাদৃশ্য কল্পনা করা ঠিক নয়। সুতরাং, আশ্রয়বাক্যের ভিত্তিতে সিদ্ধান্তকে সত্য বলা যায় না।

(১৭) মানুষের মতো কুকুরের চোখ, কান, মাথা আছে। মানুষ চিন্তা করতে পারে। অতএব, কুকুরও চিন্তা করতে পারে।

মন্তব্য : এটি দুষ্ট উপমা যুক্তি। প্রাণীদের মধ্যে কেবল মানুষ চিন্তা করতে পারে। মানুষ উন্নত ধরনের মস্তিষ্কের অধিকারী। মানুষের মস্তিষ্কের গঠন অন্য প্রাণীদের মস্তিকের গঠন থেকে ভিন্ন। অন্য প্রাণীদের ক্রিয়াগুলি বুদ্ধিপ্রসূত নয়। ক্রিয়াগুলি সহজাত প্রবৃত্তির দ্বারা নিয়ন্ত্রিত।

(১৮) পাকস্থলি থেকে যেমন পাচক রস নির্গত হয়, যকৃৎ থেকে যেমন পিত্তরস নির্গত হয়, তেমনি মস্তিষ্ক থেকে নিশ্চয়ই চিন্তা নিঃসৃত হয়।

মন্তব্য : শরীরের অভ্যন্তরে যেসব রস নির্গত হয় সেগুলি অনালী বা সনালী গ্রন্থির ক্রিয়ার ফলে সৃষ্টি হয়। মস্তিষ্কের ক্রিয়ার সঙ্গে অনালী ও সনালী গ্রন্থির ক্রিয়ার তুলনা করা যায় না। মস্তিষ্কের বিশেষ ধরনের ক্রিয়ার ফলে মনে চিন্তার সৃষ্টি হয়। সুতরাং এটি মন্দ উপমা যুক্তি।

(১৯) প্রায়ই জলে স্নান করবে না। কারণ এক টুকরো দড়ির মতো শরীরেও পচনের আশঙ্কা আছে।

মন্তব্য : মানবদেহের সঙ্গে দড়ির কোনো সাদৃশ্য নেই। দড়ি ভিজলে পচে যায়। শরীর ভিজলে পচে যায় না। সিদ্ধান্তটির সম্ভাব্যতার মাত্রা শূন্য।

(২০) নেপোলিয়নের রাশিয়া অভিযান তাঁর পতনের কারণ। কাজেই, হিটলারের রাশিয়া অভিযানও তার পতনের কারণ।

মন্তব্য : এটি মন্দ উপমা যুক্তি। দুটি অভিযানের মধ্যে কয়েকটি বিষয়ে সাদৃশ্য লক্ষ করে দুটির মধ্যে আর একটি বিষয়ে সাদৃশ্য কল্পনা করা হয়েছে। যুক্তিটি অবৈধ। কারণ এই সাদৃশ্যের ভিত্তি হল কয়েকটি অগভীর (superficial) সাদৃশ্য, সাদৃশ্যগুলি মৌলিক নয়।

 

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *