কোনি উপন্যাস প্রশ্ন উত্তর মাধ্যমিক বাংলা গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্নোত্তর
কোনি উপন্যাস প্রশ্ন উত্তর
কোনি উপন্যাস প্রশ্ন উত্তর মাধ্যমিক বাংলা
কোনি উপন্যাস: প্রশ্নঃ “ফাইট কোনি, ফাইট”-সাধারণ সাঁতারু থেকে চ্যাম্পিয়ন হয়ে উঠতে গিয়ে কোনিকে কী ধরনের ‘ফাইট’ করতে হয়েছিল, নিজের ভাষায় লেখো।
কোনি উপন্যাস: উত্তর : প্রখ্যাত ক্রীড়া সাংবাদিক মতি নন্দী রচিত ‘কোনি’? উপন্যাসের কেন্দ্রীয় চরিত্র কোনি। সমগ্র উপন্যাসে কোনির সাঁতার হিসেবে প্রতিষ্ঠার জন্য লড়াই সংগ্রামের কথা আবর্তিত হয়েছে।
উপন্যাসের শুরুতে গঙ্গার ঘাটে বারুণী উপলক্ষ্যে আম কুড়োনোকে কেন্দ্র করে কোনির লড়াকু মানসিকতা ফুটে উঠেছে। দরিদ্র অভাবী পরিবারে জন্মগ্রহণ করে কোনি প্রতি মুহূর্তে চ্যালেঞ্জের সম্মুখীন হয়েছে।
পিতার মৃত্যুর পর দাদা অভাবী সংসারের হাল ধরার চেষ্টা করলেও তার অকাল মৃত্যুতে শেষ পর্যন্ত কোনির অস্তিত্ব বিপন্ন হওয়ার সম্মুখীন হয়ে পড়ে। কিন্তু তার লড়াকু মানসিকতার জন্য কোনো প্রতিকূলতাই তাকে টলাতে পারেনি। নিজের প্রতিভার স্ফূরণে প্রশিক্ষক ক্ষিতীশের ভূমিকাও এ প্রসঙ্গে উল্লেখের দাবি রাখে।
কোনির জেদের বহিঃপ্রকাশ ঘটে অবিরাম হাঁটা প্রতিযোগিতার মধ্য দিয়ে। তারপর রবীন্দ্র সরোবরে সাঁতার প্রতিযোগিতায় হিয়া মিত্রের কাছে সাঁতারের কৌশল না জানার কারণে পরাজিত হলেও কোনি ভেঙে পড়েনি। পরাজয়ের গ্লানি অতিক্রম করতে পেরেছে।
পরবর্তী সময়ে সাঁতার প্রশিক্ষক ক্ষিতীশের তত্ত্বাবধানে তার সাঁতার প্রশিক্ষণ শুরু হয়। সংকীর্ণ ষড়যন্ত্রের জন্য জুপিটার ক্লাবে ই সাঁতার শেখার জন্য পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হলেও সে ক্লাবে ভরতি হতে পারেনি। নানা প্রতিবন্ধকতা তার সাঁতার প্রশিক্ষণপর্বে এসে পড়ে।
ক্ষিতীশের আপ্রাণ চেষ্টা ও প্রশিক্ষণের মাধ্যমে কোনি তার প্রতিভা সকলের সামনে উন্মোচিত করে। স্টেট চ্যাম্পিয়ানশিপে নিজের যোগ্যতা ও কৃতিত্ব জানান দিলেও ঘৃণ্য চক্রান্তের সে শিকার হয়। প্রথম হলেও দ্বিতীয় স্থান করা ও প্রতিযোগিতাকালে দু-বার তাকে ডিসকোয়ালিফাই করা।
জাতীয় চ্যাম্পিয়ানশিপে মাদ্রাজে গিয়েও তাকে ঘৃণ্য ষড়যন্ত্রের শিকার হতে হয়। তাকে না খেলিয়ে বসিয়ে রাখা হয়। সতীর্থদের কাছে কোনিকে চোর প্রতিপন্ন করার চেষ্টা করা হয়।
কিন্তু কোনির সাফল্যকে আটকে রাখার ক্ষমতা কারওর নেই। তাই বিশিষ্ট সাঁতার অমিয়ার পরিবর্ত প্রতিযোগী হিসেবে নিজের কৃতিত্ব ও প্রতিভার প্রমাণ সে দিয়েছিল। আর এভাবেই কোনি একজন সাধারণ সাঁতারু থেকে চ্যাম্পিয়ান হয়ে উঠতে গিয়ে তাকে ফাইট করতে হয়েছিল।
প্রশ্নঃ “ক্ষিদ্দা, এবার আমরা কী খাব?”-বক্তা কে? উদ্দিষ্ট ব্যক্তি কীভাবে তাদের সাহায্য করেছেন?
উত্তর : স্বনামধন্য ক্রীড়া সাংবাদিক ও সু-সাহিত্যিক মতি নন্দী রচিত ‘কোনি’ উপন্যাসের অষ্টম পরিচ্ছেদের শেষ পঙ্ক্তিটি আলোচ্য অংশে উদ্ধৃত। উক্ত উক্তিটির বক্তা উপন্যাসের কেন্দ্রীয় চরিত্র কোনি –কনকলতা পাল।
অ্যাপোলো ক্লাবে সাঁতার প্র্যাকটিসে না আসায় খোঁজ নিতে গিয়ে ক্ষিতীশ জানতে পারেন সেদিন রাতে কোনির দাদা মারা গেছে। দাদার মৃত্যুতে কোনি শোকবিহ্বল—দিশাহারা হয়ে যায়। ক্ষিতীশের কাছে কোনি তার ভবিষ্যতের প্রতি ইঙ্গিত দিতেই উপরোক্ত উক্তিটি করেছে।
কোনির পারিবারিক দারিদ্র্যে যাতে তার স্বপ্ন ব্যর্থ না হয়, তার জন্য ক্ষিতীশ অসহায় কোনির সমস্ত দায়ভার নিজের কাঁধে তুলে নিয়েছেন। তাকে নিজের টেলারিং দোকানে মাসিক চল্লিশ টাকা বেতনে কাজ দিয়েছেন। ক্ষিতীশের বাড়িতেই তার খাওয়াদাওয়ার ব্যবস্থা হয়েছে।
নিজের আর্থিক অনটনের মধ্যেও ক্ষিতীশ কোনির জন্য এই সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে দিয়েছেন। কোনি স্বপ্নে মৃত দাদার কাছে চিড়িয়াখানায় যাওয়ার জেদ ধরলে ক্ষিতীশ তাকে সেখানে বেড়াতে নিয়ে গেছেন। কোনির শারীরিক পুষ্টি বৃদ্ধি ও উৎসাহের জন্য উপযুক্ত খাদ্যগুণ সমৃদ্ধ খাদ্যের ব্যবস্থা ক্ষিতীশ করেছেন।
প্রতিদিন তিনি কোনির জন্য দুটো ডিম, দুটো কলা ও দুটো টোস্ট বরাদ্দ করেছেন। একজন দক্ষ সাঁতারু হিসেবে কোনিকে গড়ে তোলার প্রাণান্তকর প্রচেষ্টা চালিয়ে গেছেন ক্ষিতীশ।
প্রশ্ন – “আপনি আমার থেকে চার হাজার গুণ বড়োলোক, কিন্তু চার লক্ষ টাকা খরচ করেও আপনি নিজে শরীরটাকে চাকর বানাতে পারবেন না।”—বক্তা কাকে, কেন একথা বলেছিলেন?
উত্তর : বিশিষ্ট কথাসাহিত্যিক ও ক্রীড়া-সাংবাদিক মতি নন্দী রচিত ‘কোনি’ উপন্যাস থেকে নেওয়া প্রশ্নোদ্ভূত মন্তব্যটির বক্তা ক্ষিতীশ সিংহ। তিনি ধনী ব্যবসায়ী বিশালদেহী বিষ্টুচরণ ধরের উদ্দেশে উক্ত মন্তব্যটি করেছেন।
বারুণী উপলক্ষে গঙ্গার ঘাটে স্নান করতে আসা ক্ষিতীশ সিংহের সঙ্গে বিশালদেহী বিষ্টুচরণ ধরের আলাপ হয়। ক্ষিতীশ সিংহ নিজে স্বাস্থ্য সচেতন এবং সুঠাম দেহের অধিকারী। উপন্যাসের কাহিনি- সূত্রে জানা যায় যে, তিনি একজন সাঁতার প্রশিক্ষক। বিষ্টুচরণ ধরের গঙ্গার ঘাটে দীর্ঘ সময় ধরে মালিশ করানো দেখে ক্ষিতীশ উপলব্ধি করেন যে লোকটি মোটেই স্বাস্থ্য সচেতন নন।
শরীরের ওজন তিন মন। ফলে দেহের ওজন বৃদ্ধির জন্য সে যে শারীরিক কষ্টের মধ্যে আছে—তা ক্ষিতীশ উপপব্ধি করে। তাই সেধে আলাপ জমানো বিষ্টুচরণ ধরকে ক্ষিতীশ তার স্বাস্থ্য সম্পর্কে সচেতন করার চেষ্টা করেন। আর তাই তিনি প্রথমে বিষ্টুচরণ ধরের রক্তচাপ, ব্লাড সুগার, কোলেস্টেরল-এর মাত্রা জানতে চান।
কিন্তু এতে বিষ্টুবাবু তাঁর প্রতি বিরক্ত হন এবং জানান গঙ্গার ঘাটে চান করতে এসেছেন—তিনি যেন চান করেই ফিরে যান। বিষ্টুবাবুর এই কথার সূত্রেই ক্ষিতীশ প্রশ্নোদ্ধৃত মন্তব্যটি করেন।
প্রশ্ন – “এটা বুকের মধ্যে পুষে রাখুক।”—কী পুষে রাখার কথা বলা হয়েছে? কী কারণে এই পুষে রাখা?
উত্তর : বিখ্যাত ক্রীড়া-সাংবাদিক ও লেখক মতি নন্দী রচিত ‘কোনি’ উপন্যাসের নবম পরিচ্ছেদ থেকে আলোচ্য অংশটি নেওয়া হয়েছে। কাহিনিসূত্রে জানা যায়, কোনি জীবনের প্রথম বার রবীন্দ্র সরোবরে অনুষ্ঠিত সাঁতার প্রতিযোগিতায় অংশগ্রহণ করেছিল।
কিন্তু উপযুক্ত প্রশিক্ষণের অভাবে কোনি সেদিন প্রশিক্ষিত রিয়া মিত্রের কাছে পরাজিত হয়। পরাজয়ের গ্লানি আর দাদার কাছে রাখা প্রতিজ্ঞা না রাখতে পারার যন্ত্রণা তাকে গ্রাস করে, মনের প্রতিশোধস্পৃহার আগুন জ্বলে ৷ আলোচ্য অংশে মানসিক যন্ত্রণা ও প্রতিশোধস্পৃহা পুষে রাখার কথাই বলা হয়েছে।
একজন দক্ষ সাঁতার প্রশিক্ষকের কয়েকটি গুণ থাকা জরুরি—এ কথা জানেন ক্ষিতীশ।আর তাই সাঁতার শিক্ষার্থীর মনস্তাত্ত্বিক দিকটাও খেয়াল রাখতে হয়। সাধারণজ্ঞানও খুব জরুরি বলে ক্ষিতীশের মত। একজন দক্ষ সাঁতার প্রশিক্ষককে তাই শিক্ষার্থীর মানসিক অবস্থার পরিবর্তন করা, মনের সুপ্ত বাসনাকে জাগিয়ে তোলার কাজটি করতে হয়।
কোনির মনকে বুঝে—তার মতো করে তাকে গড়ে তুলতে চান ক্ষিতীশ। প্রতিপক্ষকে পরাজিত করার মানসিক প্রস্তুতিটা করতে হয় তার প্রশিক্ষককেই। এক্ষেত্রে চিড়িয়াখানায় কোনির প্রতিপক্ষ হিয়ার দিদিমণির কাছে জল চেয়ে না পাওয়ায় ধনীর দুলালি হিয়ার প্রতি কোনির আক্রোশ তৈরি হয়। এই হিয়াই তো কোনির আগামী দিনের মূল প্রতিপক্ষ। বেঙ্গল চ্যাম্পিয়ন হওয়ার জন্য হিয়াকে পরাজিত করতে হবে।
আর তাই দক্ষ সাঁতার প্রশিক্ষক ক্ষিতীশ এ কথা বোঝেন। হিয়ার প্রতি কোনির আক্রোশ ভবিষ্যতে যে-কোনো প্রতিযোগিতায় তাকে সফল করে তুলবে। কোনিকে তার লক্ষ্যে এগিয়ে নিয়ে যেতে সাহায্য করবে।
প্রশ্ন – ‘কোনি’ উপন্যাসের কাহিনি অবলম্বনে স্বামীর যোগ্য সহধর্মিণী রূপে লীলাবতীর পরিচয় দাও।
উত্তর : প্রখ্যাত ক্রীড়া-সাংবাদিক ও লেখক মতি নন্দীর ‘কোনি’ উপন্যাসের প্রধান চরিত্র যদি হয় কোনি ও ক্ষিতীশ, তাহলে এই দুই চরিত্রকে ধারণ করেছে ক্ষিতীশের স্ত্রী লীলাবতী। সে ক্ষিতীশের কেবল মেরুদণ্ড হিসেবেই কাজ করেনি, সমগ্র উপন্যাস জুড়ে এক প্রখর ব্যক্তিত্ব ও নিজস্বতারও ছাপ স্পষ্ট করে রেখেছে। আসলে উপন্যাসে স্বল্পসংখ্যক চরিত্রের মধ্যে লীলাবতী চরিত্রটি উজ্জ্বল ও সক্রিয় তথা প্রাণচঞ্চল।
স্বামী ক্ষিতীশের যোগ্য সহধর্মিণী রূপে লীলাবতী নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করেছে। কোনির সাফল্যে ক্ষিতীশের ভূমিকা অবিসংবাদিত হলেও লীলাবতীর নীরব সম্মতির কারণেই তা সম্ভবপর হয়েছে। ক্ষিতীশ একজন দক্ষ, সৎক্রীড়া প্রশিক্ষক। তাঁর আবেগ, তাঁর বিশ্বাস, তাঁর ইচ্ছার মর্যাদাদানে লীলাবতী কোনো কার্পণ্য করেনি।
স্বামীর স্বপ্ন—কোনিকে দক্ষ সাঁতারু হিসেবে তৈরি করা। স্বামীর সেই স্বপ্নকে বাস্তবায়নের জন্য সংসার বিমুখ সাঁতার পাগল ক্ষিতীশের অনুপস্থিতিতে সংসারের হাল ধরেছে। স্বামীর স্বপ্নকে বাস্তবে রূপ দিতে নিজের টেলারিং-এর দোকানে অভাবী কোনিকে ঠাঁই দিয়েছে।
কারণ সে জানে ক্ষিতীশের লক্ষ্যপূরণের হাতিয়ার কোনি। দারিদ্র্যক্লিষ্ট কোনির জন্য সে আর্থিক সহযোগিতা পরোক্ষভাবে করেছে। স্বামী ক্ষিতীশের কোনির জন্য সময় ব্যয় করার পিছনে লীলাবতীর প্রচ্ছন্ন সায় ছিল। সমগ্র উপন্যাসে লীলাবতী স্বামী উ ক্ষিতীশের যোগ্য সহধর্মিণী হিসেবে আত্মপ্রকাশ করেছে।
প্রশ্নঃ “অবশেষে কোনি বাংলা সাঁতার দলে জায়গা পেল।”—কোনি কীভাবে বাংলা সাঁতার দলে জায়গা পেল তা সংক্ষেপে লেখো।
উত্তর : মাদ্রাজে অনুষ্ঠিত জাতীয় সাঁতার প্রতিযোগিতায় কোনিকে বাংলা দলে অন্তর্ভুক্ত করার প্রস্তাব দিয়েছিলেন হিয়া মিত্রের প্রশিক্ষক প্রণবেন্দু বিশ্বাস। সাঁতারের প্রশিক্ষক ক্ষিতীশ সিংহের প্রতি বিরূপ মনোভাব পোষণ করা জুপিটারের সদস্যরা কোনিকে নির্বাচিত করতে চাননি ক্ষিতীশের কাছে প্রশিক্ষণ নেয় বলে।
হিয়া মিত্রের প্রতিদ্বন্দ্বী কোনির পক্ষ যে হিয়ার প্রশিক্ষক প্রণবেন্দু নেবেন তা তাঁরা ভাবতেও পারেননি। কোনিকে বাদ দিতে চাওয়া ধীরেন ঘোষ স্টেট চ্যাম্পিয়ানশিপে কোনির আচরণের উল্লেখ করেন। যদিও কর্মকর্তারা চক্রান্ত করে দুটি ইভেন্টে কোনিকে ডিসকোয়ালিফাই করেন ও একটি ইভেন্টে প্রথম হওয়া সত্ত্বেও তা মেনে নেননি।
প্রণবেন্দু এই অবিচারের উল্লেখ করে কোনিকে বাংলা দলে নিতে চাইলে ক্রুদ্ধ ধীরেন ঘোষ টেবিলে ঘুষি মেরে কোনিকে বাংলা দলে না নেওয়ার কথা পুনরুচ্চারণ করেন। কিন্তু নাছোড়বান্দা প্রণবেন্দু বলেন, কোনিকে বাদ দিলে বালিগঞ্জ সুইমিং ক্লাবের সুইমারদের তিনি দলভুক্ত করবেন না, তাদের উইথড্র করবেন।
প্রণবেন্দুর এই প্রস্তাব যে কখনোই সম্ভব নয় তা সবাই জানতেন। মূলত প্রণবেন্দু বিশ্বাসের একক লড়াইয়ের জন্য কোনি বাংলা সাঁতার দলে অন্তর্ভুক্ত হলো। ধীরেন ঘোষ নীচ মনের পরিচয় দিয়ে প্রণবেন্দুর ব্যক্তিস্বার্থের উল্লেখ করলে প্রণবেন্দু বলেন মহারাষ্ট্রের রমা যোশিকে প্রতিহত করার জন্যই তিনি কোনিকে দলে চান, অন্য কোনো স্বার্থ সেখানে নেই।
করে গলায় সোনার মেডেল পরে জীবনযুদ্ধেও জয়ী হয়।
প্রশ্ন – ক্ষিতীশ সিংহ কোনিকে সাঁতারের চ্যাম্পিয়ন করানোর জন্য যে কঠোর অনুশীলনের ব্যবস্থা করেছিলেন তার পরিচয় দাও। [«]
‘ঝি’-মন্তব্যও সহ্য করেছে। গরিবদের প্রতি বড়োলোকেদের ঘেন্না সে বুঝে গেছে।
উত্তর : মতি নন্দীর ‘কোনি’ উপন্যাসে প্রধান চরিত্র কনকচাঁপা পাল ওরফে কোনিকে সাঁতারের প্রশিক্ষণ দেওয়ার জন্য প্রশিক্ষক ক্ষিতিশ সিংহরে চেষ্টার অন্ত ছিল না। বস্তির দরিদ্র মেয়ে কোনির মধ্যে যথার্থ সুইমারের লক্ষণ খুঁজে পেয়েছিল কোচ ক্ষিতীশ সিংহ।
কঠিন প্র্যাকটিসের দিয়ে কোনিকে চ্যাম্পিয়ন সাঁতারু বানানোর লক্ষ্যে অবিচল ক্ষিতীশ। দাদার অকাল মৃত্যুর পরে কোনির পাশে প্রিয় কোচ ‘ক্ষিদ্দা’ যেমন দাঁড়ান তেমনই দারিদ্র্যজনিত অপুষ্টির হাত থেকে কোনিকে রক্ষা করার জন্য তার পুষ্টিকর খাবারের ব্যবস্থা করেন। তবে অনুশীলনের সময় এই ক্ষিতীশ আবার নির্মম।
প্রবল ক্লান্তি গ্রাস করায় সাঁতার কাটতে কাটতে কোনি কাতর কণ্ঠে বলেন— ‘পায়ে পড়ি ক্ষিদ্দা, আর আমি পারছি না।’ কিন্তু ক্ষিতীশ কোনো অজুহাত শুনতে চান না। কখনও ঢিল ছুড়ে, কখনও বাঁশের লগা দিয়ে আঘাতের ভয় দেখিয়ে তিনি কোনিকে অনুশীলনে { বাধ্য করেন।
সুইমিং পুলের প্লাটফর্ম ধরে কোনি মুখ বুজে কাঁদলে ও পাথরের মতো মুখ নিয়ে ক্ষিতীশ সিংহ দাঁড়িয়ে থাকে। কোনি যাতে জল থেকে না ওঠে সেজন্য বাঁশের লগা হাতে ক্ষিতীশ সতর্ক দৃষ্টি রাখেন। ক্লান্ত, বিধ্বস্ত কোনি হা হা করে বাতাস গেলে। কিন্তু { প্রশিক্ষক ক্ষিতীশ সিংহ কোনির প্রতিভাকে আরও শানিত করার জন্য অনুশীলনে কঠোর থাকেন।
প্রশ্ন – দারিদ্র্য ও অপমান কোনির চরিত্রকে কীভাবে গড়ে দিয়েছে লেখো। [«]
উত্তর : কবি নজরুল বলেছেন—‘হে দারিদ্র্য, তুমি মোরে করেছ মহান।’ জীবনে দারিদ্র্যের প্রভাব অমোঘ। অপমানও মানুষের > চরিত্রকে অব্যর্থ করে তোলে। দারিদ্র্য ও অপমান কোনিকে অটল, অদম্য, অপরাজেয় করে তুলেছে।
গঙ্গায় কোনির আম কুড়ানোয় দারিদ্র্য আছে। প্রাপ্য আম আদায়ে ও মারামারিতে প্রাপ্য মর্যাদা আদায়ে কোনি সফল। ২০ ঘণ্টা হাঁটা প্ৰতিযোগিতা শেষ করে সে মর্যাদা পেয়েছে। এক মাইল সাঁতার প্রতিযোগিতাও সম্পূর্ণ করে যথার্থপ্রতিযোগী হয়েছে। বিদ্রুপে কোনি অপমানিত। জুপিটারে ভর্তি না-নেওয়ায়ও অপমানিত।
তাঢেল কষ্ট মেনেও কঠোর থেকে কঠোরতর প্রশিক্ষণ নিয়ে গেছে।‘ক্ষিদ্দা’র আর্থিক ও মানসিক সাহায্য নিয়েছে, সেই দারিদ্র্যের জন্যই। সেজন্যই লীলাবতীর দোকানে কাজ করেছে এবং অমিয়ার (
জুপিটারের প্রতিযোগিতায় অমিয়াকে হারিয়ে অপমানের শোধ নিয়েছে। চিপক-পরিবেশে কোনিকে গরিব, দেখতে খারাপ, নিরক্ষর, কারওর কথা না-বলা ও চোর-অপবাদ দেওয়ার বিরুদ্ধে তীব্র কথা শুনিয়েছে। ভণ্ডদের মুখোশ খুলে দিয়েছে। সাঁতারে বেঙ্গলকে চ্যাম্পিয়ন করে অভিনন্দন কুড়িয়েছে।
প্রশ্নঃ কোনির সাঁতারু জীবনের প্রেরণা ‘ক্ষিদ্দা’আলোচনা করো।
উত্তর : বছর পনেরো-ষোলোর ঘোর কালো লিকলিকে শরীরের অতি গরিব ডানপিটে মেয়ে কোনি। সে গঙ্গায় খেলাচ্ছলে সাঁতার কাটে, মারপিট করে, খুনসুটি করে। দৈবাৎ তীক্ষ্ণ সাঁতার প্রশিক্ষকের পদ থেকে চক্রান্তে একরকম বহিষ্কৃত হন তিনি। তাই প্রশিক্ষক ‘ক্ষিদ্দা’র নজরে আসে সে। এদিকে নিজের ক্লাবে মুখ্য ক্লাবের প্রতি তাঁর বিদ্বেষ।
ক্ষিদ্দার একমুখী বোধ, ট্যালেন্ট জন্মায় না। তাকে খুঁজে আনতে হয়, গড়ে তুলতে হয়। ‘কোনি সেই গুড মেটিরিয়াল’। তাঁর জেদ, কোনিকে উপযুক্ত প্রশিক্ষণে ভারত সেরা করে প্রতিপক্ষকে জবাব দেবেন। কিন্তু কোনি বস্তির দরিদ্র মেয়ে। খাবার, কস্টিউম, তোয়ালে পর্যন্ত তার নেই।
তার অভিমান আছে, জেদ আছে। একদিকে তার ভাগ্যহত জীবন, অন্যদিকে সীমিত আর্থিক অবস্থা ও প্রবল প্রতিপক্ষতা সত্ত্বেও, ক্ষিদ্দা তাঁর কঠোর অনুশীলনে, সোহাগে ও যাবতীয় উজ্জীবিত নীতি-উপদেশে তাকে ইস্পাত-কঠিন করে তুলেছেন। কোনিও শিল্পীর হাতের শিল্প হয়ে গিয়েছে।
অতএব কোনির জীবনের সমস্ত প্রেরণা তথা কেন্দ্রবিন্দু শ্রদ্ধেয় ক্ষিদ্দা। ক্ষিদ্দার প্রেরণাতেই সাঁতারু কোনির ভারত বিজয়।
প্রশ্নঃ ‘কোনি’ উপন্যাস অবলম্বনে সাঁতার প্রশিক্ষক ক্ষিতীশ সিংহের চরিত্র সংক্ষেপে আলোচনা করো।
উত্তর : প্রখ্যাত ক্রীড়া সাংবাদিক ও লেখক মতি নন্দীর ‘কোনি’ উপন্যাসে সাঁতার প্রশিক্ষক ক্ষিতীশ সিংহ একটি উল্লেখযোগ্য ও অন্যতম প্রধান চরিত্র। উপন্যাসের শুরু থেকেই তাঁর বুদ্ধিমত্তার সঙ্গে পাঠকের পরিচয় ঘটে। ধনী বিষ্টু ধরের নির্বুদ্ধিতা ও উচ্চাকাঙ্ক্ষাকে কাজে লাগতে তিনি নিজের কার্যসিদ্ধি করেছেন
জুপিটার ক্লাবের বার্ষিক প্রতিযোগিতার বাইরে থেকেও কোনি যাতে চিরপ্রতিদ্বন্দ্বী অমিয়াকে হারাতে পারে, সেই কৌশলও সম্ভব—ক্ষিতীশের মতো প্রখর বুদ্ধিমান ব্যক্তির।
ক্ষিতীশ পঁয়ত্রিশ বছরের একজন অভিজ্ঞ প্রশিক্ষক ছিলেন। তাঁর দু-চোখে সেই অভিজ্ঞতার স্পষ্ট ছাপ উপন্যাসের সমস্ত অংশ জুড়ে রয়েছে। কোনির প্রতিভাকে তাই চিনে নিতে তিনি ভুল করেননি।
কোনির সাঁতার প্রশিক্ষক হিসেবে আত্মপ্রকাশের পর থেকে তাঁকে নানাভাবে অপমানিত হতে হয়েছে, নানা বাধারও সম্মুখীন হতে হয়েছে। তা সত্ত্বেও তিনি হাল ছাড়েননি। অদম্য জেদ নিয়েই বাংলার সাঁতারু কোনিকে বিশ্বের দরবারে নিয়ে গেছেন।
একজন যথার্থ গুরু ছিলেন ক্ষিতীশ। অভাবী সংসার হওয়া সত্ত্বেও কোনির সাঁতার শিক্ষার সমস্ত দায়িত্ব নিজের কাঁধে নিয়েছেন। পিতৃহীনা কোনির পিতার অভাব মিটিয়েছেন তিনিই। যথার্থ গুরুর মতো দার্শনিক প্রজ্ঞায় ঋদ্ধ ক্ষিতীশ।
কোনিকে জীবনের সঠিক পথ দেখানোর কাজ করেছেন তিনি। জীবনে দুঃখ আসবে, যন্ত্রণা আসবে—তারপর সে দুঃখ ও যন্ত্রণা ছাপিয়ে একদিন আসবে সাফল্য—এই দার্শনিক সত্যকে যথার্থ গুরুর মতোই ক্ষিতীশ শিক্ষার্থী কোনির অন্তরে জাগিয়ে তুলেছেন।